বাংলার অ্যামাজন! আমেরিকার একটি নদীর বুকে লুকিয়ে থাকা বিপন্ন প্রজাতির এক জগৎ।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে, সাভানা শহর থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরত্বে, প্রকৃতির এক লুকানো রত্ন যেন অপেক্ষা করছে। আলতামাহা নদী, যা কিনা “ছোট্ট অ্যামাজন” নামে পরিচিত, তার বুকে লুকিয়ে আছে জীববৈচিত্র্যের এক বিশাল সম্ভার।
১৪০ মাইল দীর্ঘ এই নদীটি তার শান্ত স্রোত, ঘন বনভূমি, আর নানা ধরনের বন্য প্রাণীর জন্য সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে।
এই নদী শুধু একটি জলধারা নয়, বরং এটি প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। এখানে দেখা মেলে এক অত্যাশ্চর্য বাস্তুতন্ত্রের, যেখানে ১২০টিরও বেশি বিপন্ন প্রজাতির আবাসস্থল রয়েছে।
প্রকৃতির সংরক্ষণ সংস্থা (The Nature Conservancy) আলতামাহা নদীকে বিশ্বের ৭৫টি “শেষ আশ্রয়স্থল”-এর মধ্যে অন্যতম হিসেবে ঘোষণা করেছে।
নদীর বুকে নৌকাবিহারের অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। এখানকার ঘন সবুজ বন, সাইপ্রেস গাছের সারি, আর নদীর ধারে খাড়া পাহাড়গুলো যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করে।
আলতামাহার জলে দেখা মেলে নানা ধরনের পাখির, যেমন – সাদা বকের দল, যারা তাদের লম্বা পা ফেলে অগভীর জলে খাবার খুঁজে ফেরে। এছাড়াও এখানে রয়েছে ঈগল, যারা উঁচু গাছের ডালে তাদের বাসা তৈরি করে এবং শিকারের সন্ধানে ওড়ে বেড়ায়।
নদীর বুকে ভ্রমণের সময় মাঝে মাঝে দেখা মেলে কুমিরের, যা এই অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ। এখানকার জলের নিচে লুকিয়ে থাকে বিশাল আকারের ক্যাটফিশ ও অন্যান্য মাছ।
মাঝে মাঝে জলের উপরিভাগে লাফিয়ে ওঠে রুপোলি রঙের মাছ, যা নৌকার ডেকে এসে পরে এক অন্যরকম দৃশ্যের সৃষ্টি করে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে, এই নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। ১৮২০-এর দশকে, ক্রীতদাসদের দ্বারা খনন করা একটি সংকীর্ণ খাল, যা ‘রাইফেল কাট’ নামে পরিচিত, এই নদীর গতিপথ সংক্ষিপ্ত করতে সাহায্য করেছিল।
আলতামাহার শান্ত স্রোতে নৌকাবিহার যেমন আনন্দদায়ক, তেমনই এখানে বিপদও লুকিয়ে থাকতে পারে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে নদীর বুকে চলতে অসুবিধা হতে পারে।
তবে স্থানীয় গাইড ও অভিজ্ঞ নাবিকদের সহায়তায় এই যাত্রা আরও নিরাপদ ও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
আলতামাহা নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য একে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এটি শুধু একটি নদী নয়, বরং প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ, যা আমাদের রক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ রক্ষার এই ধারণা, বাংলাদেশের সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার চেষ্টার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার