বিখ্যাত ফরাসি অভিনেতা জেরার্ড দেপর্দিয়ুকে যৌন নির্যাতনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্যারিসে ২০২১ সালে একটি সিনেমার শুটিং চলাকালীন সময়ে দুইজন নারীর প্রতি এই ধরনের আচরণ করার অভিযোগে ১৮ মাসের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাকে। খবরটি ফ্রান্সের চলচ্চিত্র জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
জানা যায়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ‘লে ভলেট ভার্টস’ (Les Volets Verts) নামক সিনেমার শুটিং চলাকালে এই ঘটনা ঘটে। অভিযোগ অনুযায়ী, ৭৬ বছর বয়সী দেপর্দিয়েu সিনেমার সেটে এক নারীর শরীরের বিভিন্ন অংশে স্পর্শ করেন এবং অশ্লীল মন্তব্য করেন।
ভুক্তভোগী নারীর মধ্যে একজন ছিলেন ৫৪ বছর বয়সী পোশাক শিল্পী (যিনি ‘অ্যামেলি’ নামে পরিচিত)। অভিযোগ অনুযায়ী, দেপর্দিয়েu তাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেন এবং তার সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেন। অ্যামেলি আদালতে জানান, ঘটনার সময় দেপর্দিয়েu তাকে তার নিতম্ব, পেট ও বুকের আশেপাশে ধরেন।
অ্যামেলি আরও জানান, দেপর্দিয়েu তাকে বলেন, “আমার বড় ছাতাটি ধর, আমি এটা তোমার ভিতরে ঢুকিয়ে দেব।”
আরেকজন ভুক্তভোগী, যিনি সিনেমার সহকারী পরিচালক ছিলেন (যিনি গণমাধ্যমে তার নাম প্রকাশ করতে চাননি), তিনি জানান, দেপর্দিয়েu তাকেও একাধিকবার যৌন নির্যাতন করেছেন। আদালতকে তিনি জানান, একবার রাতের বেলা শুটিং শেষে ড্রেসিং রুমের দিকে যাওয়ার সময় দেপর্দিয়েu তার স্তন স্পর্শ করেন।
এছাড়াও, আরও দুটি ভিন্ন সময়ে তিনি একই ধরনের আচরণের শিকার হন। ওই সহকারী পরিচালক ঘটনার সময় ভীতিকর পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেন এবং জানান, দেপর্দিয়েu সেটে সারাক্ষণ যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা বলতেন।
তবে, দেপর্দিয়েu তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি আদালতকে জানান, তার সম্মানহানি করার উদ্দেশ্যে গণমাধ্যম এসব অভিযোগ তৈরি করেছে। তিনি #MeToo আন্দোলন এবং যারা তার কনসার্টের বাইরে প্রতিবাদ করছিলেন, তাদেরও সমালোচনা করেন।
এই মামলার রায় ফরাসি চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, অতীতে এই ইন্ডাস্ট্রিতে নারীদের প্রতি সহিংসতার অভিযোগগুলো সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অনেকেই মনে করছেন, এই রায়ের মাধ্যমে নারীদের অভিযোগের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া হবে।
ফরাসি রাজনীতিবিদদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের বিনোদন জগতে যৌন সহিংসতা এবং হয়রানি এখনও ব্যাপক হারে বিদ্যমান। যেখানে নারী ও শিশুরা প্রায়ই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান