বিচার: আদালতে হাজির হচ্ছেন দেপার্দ্যু, তোলপাড় সিনেমাজগতে!

বিখ্যাত ফরাসি অভিনেতা জেরার্ড দেপার্ডিউ-র বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের অভিযোগের শুনানির জন্য প্যারিসের আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা রয়েছে। সোমবার (তারিখ উল্লেখ করা হয়নি) এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফরাসি সিনেমার জগতে দেপার্ডিউ এক অত্যন্ত পরিচিত নাম। তাঁর অভিনয় করা ২০০-র বেশি সিনেমা ও টেলিভিশন সিরিজ রয়েছে। অভিযোগ, ২০২১ সালে একটি সিনেমার শুটিং চলাকালীন তিনি দু’জন নারীর ওপর যৌন নির্যাতন করেছিলেন।

দেপার্ডিউ-র বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক নারী ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। তাঁদের সংখ্যা এক ডজনের বেশি। যদিও অভিনেতা বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে, এই প্রথম তিনি আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের জবাব দিতে যাচ্ছেন। অভিযুক্ত দুই নারীর মধ্যে একজন হলেন ৩৪ বছর বয়সী সহকারী পরিচালক এবং অন্যজন ৫৪ বছর বয়সী সেট ডিজাইনার।

তাঁরা দুজনেই ‘লে ভলে ভের্টস’ (Les Volets Verts) নামক সিনেমায় কাজ করেছিলেন, যা ২০২২ সালে মুক্তি পায়। এই সিনেমায় আনু গ্রিনবার্গ এবং ফ্যানি আরদাঁ-ও অভিনয় করেছেন।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে অভিনেতা ‘লে ফিগারো’ পত্রিকায় একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন। যেখানে তিনি বলেন, “আমি কখনোই কোনো নারীর ওপর নির্যাতন চালাইনি।” তিনি নিজেকে সংবাদমাধ্যমের ‘শিকার’ বলেও উল্লেখ করেন।

এর পরই সেট ডিজাইনার পুলিশের কাছে দেপার্ডিউ-র বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন, যৌন হেনস্থা এবং আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ আনেন। এর আগে, মিডিয়াপার্ট (Mediapart) নামের একটি অনুসন্ধানী ওয়েবসাইটে বেশ কয়েকজন নারীর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রকাশিত হয়, যার কিছু ঘটনা ২০০০ সালের শুরুর দিকের।

এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন নারী দেপার্ডিউ-র বিরুদ্ধে হেনস্থা ও অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন। যদিও বেশ কয়েকটি অভিযোগের সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় তা খারিজ হয়ে গেছে।

অভিনেত্রী আনু গ্রিনবার্গ এই দুই নারীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি জানান, প্যারিসে শুটিংয়ের সময় দেপার্ডিউ প্রায়ই কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন।

আদালতে এই মামলার শুনানি গত অক্টোবরে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অভিনেতার অসুস্থতার কারণে তা স্থগিত করা হয়। দেপার্ডিউ-র আইনজীবী জেরেমিয়ে আসুস জানান, অভিনেতার হার্টে অস্ত্রোপচার হয়েছে এবং ডায়াবেটিসের কারণেও তিনি অসুস্থ।

মামলার চাপেও তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। পরে আদালত নিযুক্ত চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে আদালতে হাজির হওয়ার উপযুক্ত ঘোষণা করেন। তবে, শুনানির সময় দৈনিক ৬ ঘণ্টার বেশি হবে না এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিরতি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

২০২০ সালে, অভিনেত্রী শার্লট আর্নল্ড দেপার্ডিউ-র বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। শার্লটের অভিযোগ ছিল, ২০১৮ সালে প্যারিসের বাড়িতে দেপার্ডিউ দু’বার তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছিলেন, যখন তাঁর বয়স ছিল ২২ বছর এবং অভিনেতার ৭০।

দেপার্ডিউ-র আইনজীবীরা মামলাটি খারিজ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্যারিসের প্রধান কৌঁসুলি জানান, অভিযোগটি বহাল রাখার যথেষ্ট ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং নিশ্চিত প্রমাণ’ রয়েছে। সেই তদন্ত এখনো চলছে।

জেরেমিয়ে আসুস জানিয়েছেন, অভিনেতা তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

২০১৭ সালে হলিউড পরিচালক হার্ভে উইনস্টিনের গ্রেপ্তারির পর #MeToo আন্দোলন শুরু হয়। ফ্রান্সে এই আন্দোলনের প্রভাব কিছুটা দেরিতে পড়েছে।

গত বছর সিজার অ্যাওয়ার্ডসে (ফ্রান্সের অস্কার) অভিনেত্রী জুডিথ গডরেচ, যিনি দু’জন খ্যাতিমান পরিচালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন, ফরাসি চলচ্চিত্র জগতে নারী ও মেয়েদের ওপর হওয়া নির্যাতনের বিষয়ে ‘ওমার্তা’ (নীরবতা)-র কথা উল্লেখ করেন।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *