আলোচিত অভিনেতা গারার্ড দেপার্ডিউ: এক নজরে তার জীবন!

ফরাসি চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র জেরার্ড দ্যা পার্দিয়ু, যিনি একসময় অভিনয়ের জগতে ছিলেন একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারী, বর্তমানে তাঁর ব্যক্তিজীবন এবং কর্মজীবনের উত্থান-পতনের এক জটিল আখ্যান নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বহু বছর ধরে, এই অভিনেতা তাঁর অসাধারণ অভিনয়শৈলী দিয়ে জয় করেছেন সিনেমাপ্রেমীদের মন।

তবে তাঁর খ্যাতির শিখরে আরোহণের পরেই যেন শুরু হয় বিতর্ক আর সমালোচনার ঝড়।

জেরার্ড দ্যা পার্দিয়ু ১৯৪৮ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ফ্রান্সের শাতোরু শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

দারিদ্র্য এবং অস্থির শৈশব পেরিয়ে, অভিনয় জগতে নিজের স্থান তৈরি করার জন্য তিনি পাড়ি দেন প্যারিসে। সেখানে তিনি অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেন এবং ধীরে ধীরে তাঁর অভিনয় জীবনের সূচনা হয়।

সত্তরের দশকে তিনি ফ্রান্সের সিনেমাজগতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ‘লে ভালসুজ’ (Les Valseuses)-এর মতো ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি দর্শক ও সমালোচকদের নজর কাড়েন।

এরপর ‘লুলু’, ‘পোলিস’, ‘আন্ডার শয়তান্স সান’ এর মতো সিনেমায় অভিনয় করে তিনি একজন গুণী অভিনেতা হিসেবে পরিচিত হন।

১৯৮০-এর দশকে তিনি ফ্রান্সের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

‘দ্য ওম্যান নেক্সট ডোর’, ‘জ্যাঁ দ্য ফ্লরীত’, ‘দ্য লাস্ট মেট্রো’, ‘দ্যাঁতো’ এবং ‘দ্য রিটার্ন অফ মার্টিন গ্যের’-এর মতো সিনেমায় তাঁর অনবদ্য অভিনয় আজও মানুষের মনে গেঁথে আছে।

১৯৯১ সালে ‘সিরানো দ্য বার্জারাক’-এর জন্য তিনি অস্কার মনোনয়নও পেয়েছিলেন।

নব্বইয়ের দশকে ‘আস্তেরিক্স ওবেলিক্স’ চলচ্চিত্র সিরিজে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

অভিনয় জীবনে সাফল্যের চূড়ায় থাকাকালীনই বিতর্ক যেন তাঁর সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়।

তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠতে শুরু করে।

বিভিন্ন সময়ে কুড়ি জনেরও বেশি নারী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।

যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের সত্যতা এখনও প্রমাণিত হয়নি, তবে বিষয়গুলো তাঁর সম্মানহানি ঘটিয়েছে, যা তাঁর অভিনয় জীবনের ওপরও প্রভাব ফেলেছে।

২০১৩ সালে কর সংক্রান্ত বিতর্কের জেরে তিনি রাশিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।

২০১৮ সালে, অভিনেত্রী শার্লট আর্নল্ডের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের একটি প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়।

এছাড়া, ২০২১ সালে সিনেমার শুটিং সেটে দু’জন নারীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে তাঁর বিচার শুরু হয়েছে।

প্যারিসের একটি আদালতে তাঁর বিচারকার্য চলছে।

এক সময় প্যারিসের বিখ্যাত মোমের জাদুঘর থেকে তাঁর মোমের মূর্তি সরিয়ে নেওয়া হয়।

জেরার্ড দ্যা পার্দিয়ুর জীবন, উত্থান-পতন, খ্যাতি এবং বিতর্কের এক জটিল আখ্যান।

তাঁর অভিনয় জীবনের উজ্জ্বলতা এবং তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ—সবকিছু মিলেই তিনি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে।

তাঁর এই ঘটনা, অভিনেতা জীবনের এক অন্যরকম দিক তুলে ধরে, যা বাংলাদেশের দর্শকদের কাছেও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *