জার্মান নাগরিকের পরিচয় চুরি, লন্ডনের অপরাধীর কারণে বিপর্যস্ত জীবন। একটি ভয়ংকর ঘটনার শিকার হয়েছেন জার্মানির এক তরুণ।
লন্ডনের একজন অপরাধী তার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে এমন সব অপরাধ করেছে যার ফলস্বরূপ, জার্মানিতে তার জীবন প্রায় ধ্বংসের পথে। নিজের পরিচয় চুরির কারণে এখন তিনি কোনো চাকরিও করতে পারছেন না।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে, যখন তরুণ রামি বাত্তিখ ছুটি কাটাতে লন্ডন গিয়েছিলেন। ছুটি শেষে ফিরে আসার পর তিনি জানতে পারেন তার পরিচয়পত্রটি চুরি হয়ে গেছে।
প্রথমে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি তিনি। নতুন একটি পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করেন। এর দুই বছর পর, তিনি জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করা শেষ করেন।
শিক্ষাজীবন শেষে, রামি বাত্তিখের সামনে আসে দুটি চাকরির সুযোগ – একটি তার শিক্ষানবিশ করা প্রতিষ্ঠানে, অন্যটি স্থানীয় কর বিভাগে। কিন্তু এরপরেই তার জীবনে নেমে আসে এক বিভীষিকা।
চাকরির জন্য আবেদন করার পর, কর্তৃপক্ষের নিয়মিত যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় জানা যায়, লন্ডনে তার নামে একটি অপরাধের রেকর্ড রয়েছে।
বিষয়টি জানার পর রামি সম্পূর্ণ হতবাক হয়ে যান। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই তার নিয়োগকর্তাদের জানান যে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং তিনি সেই সময়ে যুক্তরাজ্যে ছিলেন না।
এমনকি, তিনি এর প্রমাণ হিসেবে পাসপোর্ট দেখান, যেখানে তিনি যে সে সময়ে তিউনিসিয়ায় ছিলেন তার প্রমাণস্বরূপ ভিসা ও ভ্রমণের সিল ছিল।
কিন্তু কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, পুলিশের রেকর্ডের বিপরীতে তারা কেবল তার কথায় বিশ্বাস করতে পারছেন না। এরপর থেকেই শুরু হয় তার এক কঠিন লড়াই।
জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চ মাসে, অন্য একজন ব্যক্তি রামি বাত্তিখের পরিচয় ব্যবহার করে লাইসেন্স ও বীমা ছাড়া গাড়ি চালানো, জালিয়াতি এবং অন্য ব্যক্তির পরিচয়পত্র ব্যবহার করার অভিযোগে লন্ডনের একটি আদালতে ১৮ মাসের কারাদণ্ড পায়।
ভুক্তভোগী রামি বাত্তিখের বোন রেবেকা জানান, “জার্মানিতে আমরা বলি, কেউ যদি কোনো খবরে খুব বেশি ভয় পায়, তবে তার বুক ধড়ফড় করে। রামির অবস্থা ঠিক তেমনই হয়েছিল।”
২০২২ সালে, লন্ডনের একটি আদালত এই ঘটনার ভুল স্বীকার করে এবং মেট্রোপলিটন পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু তাতেও কোনো সুরাহা হয়নি।
বরং, ১৪ মাস পর, তার চুরি যাওয়া পরিচয় ব্যবহার করে লন্ডনে আরও কিছু অপরাধ সংঘটিত হয়, যার মধ্যে একটি ছিল জনসম্মুখে ছুরি বহন করা।
নিজের বিরুদ্ধে একের পর এক অপরাধের তালিকা দেখে রামি ভেঙে পড়েন। তিনি হতাশ হয়ে বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যুক্তরাজ্যের এই সমস্যাটা কী? আদালত যখন স্বীকার করেছে যে আমি অপরাধী নই এবং আমার পরিচয়পত্র চুরি হয়েছে, তাহলে কেন তারা আমার নাম অপরাধীর তালিকা থেকে সরাচ্ছে না?”
গত বছর, তিনি মেট্রোপলিটন পুলিশকে একটি চিঠি লেখেন, যারা সাধারণত অপরাধের রেকর্ড পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার কোনো সমাধান হয়নি।
বর্তমানে, রামি বাত্তিখ তার জীবন নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন। তিনি বলেন, “আমি এভাবে আর কত দিন চলব? একটি অপরাধের রেকর্ড থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করাটা অসহনীয়।
আমি অনুভব করি, আমার জীবনে এমন কিছু ভুল হয়েছে যা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমি সম্পূর্ণ অসহায়।”
চাকরি না থাকায়, তিনি তার গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন এবং এখন বন্ধুদের সঙ্গে থাকছেন। নিজের দুর্দশার কথা জানাতে তিনি গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে, তিনি লন্ডনের আদালতে চিঠি লিখে তার ডিএনএ এবং আঙ্গুলের ছাপ দিতে রাজি হন, যা তিনি জার্মান পুলিশের মাধ্যমে ইন্টারপোলের কাছে পাঠানোর প্রস্তাব দেন।
রামি বাত্তিখ তার চিঠিতে লিখেছেন, “এই জালিয়াতি আমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি কোনো চাকরি পাচ্ছি না। আমি যদি পারি, তবে আমার আঙ্গুলের ছাপ, চুলের নমুনা দিতে রাজি আছি… আমি আর এভাবে বাঁচতে পারি না।
আমি নির্দোষ এবং আমি কোনো অপরাধ করিনি। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।”
মেট্রোপলিটন পুলিশ এই বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, “আমরা এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছি এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করছি।
আমরা বুঝি, এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হওয়ার কারণে উদ্বেগ বেড়েছে, তবে আমরা খুব শীঘ্রই আবেদনকারীকে একটি আপডেট দেওয়ার চেষ্টা করব।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান