**জার্মানিতে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকদ্দমা: পেরুর কৃষকের লড়াই, ভবিষ্যতের ইঙ্গিত**
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আজ সারা বিশ্বেই দৃশ্যমান। উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের ফলস্বরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলো, যার অন্যতম উদাহরণ হলো বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল।
হিমবাহ গলন থেকে শুরু করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধি—এসবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ফল। সম্প্রতি, জার্মানির একটি আদালত পেরুর একজন কৃষকের দায়ের করা একটি মামলার রায় দিয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
পেরুর কৃষক সাওল লুসিয়ানো ইউইয়া জার্মানির বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরডব্লিউই-এর (RWE) বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। তার অভিযোগ ছিল, আরডব্লিউই-এর কার্বন নিঃসরণের কারণে তার শহর হুয়ারাজের কাছে অবস্থিত হিমবাহ গলে যাচ্ছে, ফলে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
এই বন্যার কারণে তার ও তার পরিবারের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। আদালত যদিও সরাসরি ক্ষতিপূরণের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী কোম্পানিগুলোর দায়বদ্ধতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, কার্বন নিঃসরণকারী কোম্পানিগুলো তাদের নির্গমন কমাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকতে পারে। যদি কোনো কোম্পানি তা করতে অস্বীকার করে, তাহলে তাদের নির্গমনের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্ষতির দায়ভার বহনের নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে।
এই রায়ের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণের পথ আরও সুগম হলো।
সাওল লুসিয়ানো ইউইয়ার আইনজীবী রডা ভার্হেইয়েন এই রায়কে জলবায়ু বিষয়ক মামলার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এই রায়ের ফলে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করতে উৎসাহিত হবেন।
মামলার শুনানিতে উঠে আসে, জার্মানির বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরডব্লিউই শিল্প বিপ্লব থেকে শুরু করে বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের প্রায় ০.৫ শতাংশের জন্য দায়ী। সাওলের হিসাব অনুযায়ী, তার অঞ্চলের বন্যা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৫ লক্ষ মার্কিন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৭ কোটি টাকা) মধ্যে আরডব্লিউই-কে প্রায় ১৭,৫০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা) দিতে হতে পারে।
তবে, আরডব্লিউই জানিয়েছে, তারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এককভাবে দায়ী নয়। তারা আদালতের এই রায়কে তাদের বিরুদ্ধে একটি ‘ভুল পদক্ষেপ’ হিসেবেও উল্লেখ করেছে।
তাদের মতে, আদালতের কাজ হলো পরিবেশ রক্ষার নীতি তৈরি করা, কোনো এনজিওর (NGO) দাবি পূরণ করা নয়।
এই মামলার রায় শুধু পেরুর ওই কৃষকের জন্য নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মতো দেশ, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, তাদের জন্য এই রায় একটি আশার আলো।
এখন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা