৮০ বছর আগে নাৎসি বাহিনীর বন্দীশালা বুখেনওয়াল্ডের মুক্তি দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রাক্তন জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান উলফ বর্তমান বিশ্বে চরম ডানপন্থার উত্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সংঘটিত ইহুদি নিধনযজ্ঞের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে মানবতাকে রক্ষা করতে হবে।
জার্মানির থুরিংগিয়া প্রদেশের ভাইমারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বহু মানুষ, বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হলোকাস্টের শিকার হওয়া মানুষেরা যোগ দেন। বুখেনওয়াল্ড ছিল নাৎসিদের তৈরি একটি বন্দীশালা, যেখানে ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই লক্ষ বন্দীকে আটকে রাখা হয়েছিল।
বন্দীদের মধ্যে ৫৬,০০০ জনের বেশি মানুষ হয় নির্যাতনের শিকার হয়ে, না হয় অনাহারে অথবা অসুস্থ হয়ে মারা যায়।
অনুষ্ঠানে থুরিংগিয়ার গভর্নর মারিও ভইগট বুখেনওয়াল্ডকে ‘নিয়মিতভাবে মানুষ হত্যা করার স্থান’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বন্দীশালায় যা কিছু ঘটেছিল, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের আত্মমর্যাদাবোধকে ভেঙে দেওয়া।
৭ই অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের ইসরায়েলে চালানো হামলার কথা উল্লেখ করে ভইগট বলেন, ‘তখনকার মতো এখনো ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করার মানসিকতা বর্তমান।’ হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে বন্দী করা হয়।
গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ৫০,৬৯৫ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১,১৫,০০০ এর বেশি আহত হয়েছেন।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান উলফ তার ভাষণে বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘সহিংসতা, চরমপন্থা এবং বিশ্বজুড়ে ডানপন্থার উত্থানের কারণে, আমি এখন আরও স্পষ্টভাবে কল্পনা করতে পারছি, কিভাবে সেই সময়ে এমনটা ঘটেছিল।’ তিনি গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল থাকার এবং মানবতার সুরক্ষার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনার জন্য আমাদের একটি স্থায়ী, চলমান এবং চিরন্তন দায়িত্ব রয়েছে, কারণ অশুভ শক্তিকে আর কখনোই মাথাচাড়া দিতে দেওয়া উচিত নয়।’
অনুষ্ঠানে জার্মানির অতি-ডানপন্থী দল ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’ (এএফডি)-এর সমালোচনা করে উলফ বলেন, যারা এই দলটিকে হালকাভাবে নেয়, তারা আসলে একটি বিপদজনক পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে। তাদের আদর্শের কারণে জার্মানিতে অনেকেই নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন।
বুখেনওয়াল্ড বন্দীশালায় বন্দী থাকা নাফতালি ফুরস্ট নামের ৯২ বছর বয়সী এক হলোকাস্ট survivor স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার আজও মনে আছে, বন্দীদের দ্বারা টানা হওয়া গাড়িতে করে কিভাবে মৃতদেহগুলোকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হতো।’ তিনি বর্তমান প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের পরে, এই স্মৃতির দায়িত্ব তোমাদের হাতেই তুলে দেওয়া হলো।
আমাদের কাছ থেকে তোমরা যা শিখেছ, তা মনে রেখো। কারণ তোমরা হলে সাক্ষীর সাক্ষী।’
ফুরস্ট তার ভাষণে আরও বলেন, ‘তোমরা এই স্থানে, বুখেনওয়াল্ডে ফিরে এসো, যেখানে সভ্যতা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। আমাদের হয়ে সজাগ থেকো এবং যখনই দেখবে মানবাধিকার, নারী অধিকার, শিশু অধিকার অথবা সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তখনই রুখে দাঁড়াও।
গণতন্ত্র যখন হুমকির সম্মুখীন হবে, তখন তোমরা প্রত্যেকে মানুষ হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করো।’
অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা হলোকাস্ট survivor-এর নাতি এবং ইসরায়েলি সরকারের সমালোচক ওমরি বোয়েমের একটি ভাষণ দেওয়ার আমন্ত্রণ বাতিলের দাবি জানায়। এরপর আয়োজকরা তার আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের হাতে প্রায় ৬০ লক্ষ ইউরোপীয় ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস