জার্মানিতে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগে কিশোরদের গ্রেপ্তার!

জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসীদের ওপর হামলার অভিযোগে কয়েকজন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। বুধবার ভোরে জার্মানির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই পাঁচজনকে আটক করা হয়।

এদের বিরুদ্ধে একটি উগ্র-ডানপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা ‘লাস্ট ওয়েভ অফ ডিফেন্স’ নামে পরিচিত এবং তাদের লক্ষ্য ছিল আশ্রয়প্রার্থী, অভিবাসী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ওপর হামলা চালানো।

জার্মান বিচারমন্ত্রী স্টেফানি হুবিগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, গ্রেপ্তার হওয়া সবাই যখন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি গঠন করে, তখন তারা ছিল নাবালক। সরকারি কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে বুধবার ১৩টি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের নাম প্রকাশ করা হয়নি, তাদের শুধু বেনজামিন এইচ, বেন-ম্যাক্সিম এইচ, লেন্নি এম এবং জেসন আর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জার্মান গোপনীয়তা নীতি মেনেই তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।

পঞ্চম অভিযুক্ত জেরোম এম-এর বিরুদ্ধে এই গোষ্ঠীকে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগও রয়েছে।

তবে তাদের বয়স প্রকাশ করা হয়নি।

অনুসন্ধানকারীরা আরও জানিয়েছেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে বা তার আগে এই গোষ্ঠীর জন্ম হয়। তাদের সদস্যরা নিজেদের ‘জার্মান জাতির’ শেষ রক্ষাকর্তা হিসেবে মনে করত এবং জার্মানির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চেয়েছিল।

কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন গত অক্টোবরে আল্টডবার্নে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আগুন দেয়। সৌভাগ্যবশত সে সময় ভবনে বসবাসকারী কয়েকজন অল্পের জন্য রক্ষা পান।

এছাড়াও, জানুয়ারিতে আরও দুজন অভিযুক্ত শ্মোলনে আশ্রয়প্রার্থীদের একটি বাড়িতে জানালা ভেঙে দেয় এবং আতশবাজি ব্যবহার করে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে, যা ব্যর্থ হয়। তারা দেয়ালের ওপর গোষ্ঠীর নাম এবং ‘বিদেশিরা চলে যাও’, ‘জার্মানি, জার্মানদের জন্য’, ‘নাৎসি এলাকা’ -এর মতো বিভিন্ন শ্লোগান লিখেছিল।

এছাড়াও, জানুয়ারিতে সেনফটেনবার্গে আশ্রয়প্রার্থীদের একটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের কারণে তা ভেস্তে যায়।

জার্মানিতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ ধরনের অপরাধ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

এর মধ্যে উগ্র-ডানপন্থীদের সহিংসতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জার্মানিতে অভিবাসী ও শরণার্থীদের প্রতি বিরূপ মনোভাব বেড়েছে।

উগ্র-ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) অভিবাসনবিরোধী নীতির ওপর ভিত্তি করে পার্লামেন্টে তাদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।

চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্জও সীমান্ত নীতি কঠোর করার এবং অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ক্ষমতায় আসার পর তার সরকার সিরিয়া ও আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোতে শরণার্থীদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *