জার্মানিতে এক সময়ের কুখ্যাত বামপন্থী সংগঠন রেড আর্মি ফ্যাকশন (আরএএফ)-এর প্রাক্তন সদস্য ড্যানিয়েলা ক্লেইটের বিচার শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার জার্মানির হ্যানোভারের কাছে একটি আদালতে এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
৬৭ বছর বয়সী ক্লেইটের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা এবং গুরুতর ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ অনুসারে, ক্লেইট তার সহযোগী আর্নস্ট-ফোলকার স্টাউব এবং বুর্কহার্ড গারভেগের সঙ্গে মিলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এই তিনজনই “তৃতীয় প্রজন্ম”-এর সদস্য ছিলেন, যারা বাডার-মাইনহফ গ্যাং নামেও পরিচিত ছিল।
১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে আরএএফ বেশ সক্রিয় ছিল এবং এই সময়ের মধ্যে তারা অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী। ১৯৯৮ সালে এই সংগঠনটি ভেঙে যায়।
তবে, অভিযোগ রয়েছে যে ক্লেইট এবং তার সহযোগীরা আত্মগোপনে থাকার জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহিংস ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ২.৭ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৩১ কোটি টাকার বেশি) লুটের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ এখনো স্টাউব এবং গারভেগকে খুঁজছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা এখনো বেঁচে থাকলে তাদের বয়স হবে যথাক্রমে ৫৬ ও ৭১ বছর।
জানা যায়, ক্লেইট মূলত পলাতক জীবন যাপনের সময় গাড়ি চালানোর কাজ করতেন। তবে, তিনি ডাকাতির সময় একটি খেলনা বাজুকা ব্যবহার করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
২০১৫ সালের একটি ডাকাতির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকারি কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করতেন।
তারা ভুয়া নামে গাড়ি ভাড়া নিতেন এবং অ্যাপার্টমেন্ট নিতেন। এমনকি নিজেদের কার্যকলাপ ঢাকার জন্য মাঝে মাঝে গাড়িতে আগুনও দিতেন।
আদালতের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ক্লেইটের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিচার প্রক্রিয়া প্রায় দুই বছর ধরে চলবে এবং এতে ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হবে।
ক্লেইটকে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেপ্তার করা যায়নি। অবশেষে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্লিনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে তিনি ক্লডিয়া ইভোন নামে একটি জাল ইতালীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন। তার বাড়ি থেকে একটি স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল, বিস্ফোরক এবং বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিরাপত্তার কারণে হ্যানোভারের কাছে সেলে-র উচ্চ আঞ্চলিক আদালতে এই বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আদালত ভবনটিকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সেখানে মেশিনগান ও প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে পুলিশ ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা মোতায়েন ছিলেন। আদালতের বাইরে প্রায় ৫০ জন বিক্ষোভকারী ড্যানিয়েলা ক্লেইটের সমর্থনে বিক্ষোভ করেন।
তারা বিপ্লবী ইতিহাস রক্ষার আহ্বান জানিয়ে একটি ব্যানার প্রদর্শন করেন এবং পঙ্ক মিউজিক বাজান।
উল্লেখ্য, আরএএফ ছিল ১৯৬০-এর দশকের ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ, যারা প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদ এবং জার্মানির নাৎসিবাদের অবশেষের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল।
এই গোষ্ঠী সরকার, ব্যবসা এবং বিচার বিভাগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা চালাত। একসময় আরএএফ একজন জার্মান ব্যাংক প্রধানকে হত্যা করে এবং শিল্পপতি হান্স মার্টিন শ্লিয়ারকে অপহরণ করে হত্যা করে।
ক্লেইটের বিরুদ্ধে ১৯৯১ সালে তৎকালীন জার্মান রাজধানী বনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে এবং ১৯৯৩ সালে একটি কারাগারে বিস্ফোরক হামলার সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা