জার্মানিতে খাদ্যপ্রেমীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ, কারণ তাদের প্রিয় ‘কেবাব’ সংকটে পড়ার সম্ভবনা!
জার্মানির রাস্তায় পাওয়া মুখরোচক খাবার ‘কেবাব’ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। তাদের আশঙ্কা, হয় তো কেবাবের দাম বেড়ে যাবে, নয়তো মিলবে না সহজে।
জার্মানির একটি বৃহৎ কেবাব প্রস্তুতকারক কারখানার শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণেই মূলত এই উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
**ধর্মঘটের কারণ: বেতন বৃদ্ধি ও কর্মপরিবেশের উন্নতি**
জার্মানির বাডেন-württemberg রাজ্যের মুর শহরে অবস্থিত ‘বিরতাত মিট ওয়ার্ল্ড এসই’ (Birtat Meat World SE) কারখানার শ্রমিকরা তাদের বেতন বৃদ্ধি ও কাজের পরিবেশের উন্নতির দাবিতে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন।
শ্রমিক সংগঠন ‘ফুড, বেভারেজ অ্যান্ড ক্যাটারিং ইউনিয়ন’-এর সমর্থন নিয়ে তারা এই ধর্মঘট করছেন।
শ্রমিকদের মূল দাবি হলো, তাদের মাসিক বেতন ৩৭৫ ইউরো (প্রায় ৪৪ হাজার টাকা) বাড়াতে হবে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কর্মীদের বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নেই।
একই ধরনের কাজ করেও একেকজন কর্মী একেক রকম বেতন পান। এছাড়াও, শ্রমিকরা একটি সম্মিলিত চুক্তি চাইছেন, যেখানে কারখানার সকল কর্মীর অধিকার সুরক্ষিত হবে।
এই কারখানায় কর্মরত অনেক শ্রমিক তুরস্ক, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া থেকে আসা অভিবাসী।
মাংস প্রক্রিয়াকরণের জন্য কারখানার ভেতরে হিমাঙ্কের কাছাকাছি তাপমাত্রায় কাজ করতে হয় তাদের।
গত বুধবারও শ্রমিকরা কারখানার প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্লোগান দেন, বাঁশি বাজান এবং ড্রাম বাজিয়ে প্রতিবাদ জানান।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কোম্পানি শ্রমিকদের দাবি মানতে রাজি হয়নি।
**কেবাবের চাহিদা ও সরবরাহ**
বিরতাত কোম্পানিটি মূলত কেবাবের মাংস তৈরি করে, যা জার্মানির বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুডের দোকানে সরবরাহ করা হয়।
এই কোম্পানি প্রতি মাসে ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষের কাছে তাদের পণ্য পৌঁছে দেয়।
জানা গেছে, কোম্পানিটি গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, মুরগি এবং টার্কির মাংস দিয়ে তৈরি কেবাব সরবরাহ করে থাকে।
এই ধর্মঘটের কারণে অনেক রেস্টুরেন্ট মালিক উদ্বিগ্ন।
তাদের মতে, শ্রমিক ধর্মঘট দীর্ঘস্থায়ী হলে কেবাবের দাম বাড়তে পারে অথবা এর সরবরাহ কমে যেতে পারে।
**দাম বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা**
জার্মানিতে কেবাব একটি জনপ্রিয় ও সস্তা খাবার হিসেবে পরিচিত ছিল।
কিন্তু বর্তমানে এর দাম অনেক বেড়ে গেছে।
দুই দশক আগেও যেখানে একটি কেবাব ২.৫০ ইউরোতে (প্রায় ৩০০ টাকা) পাওয়া যেত, সেখানে এখন এর দাম কমপক্ষে ৭ ইউরোর (প্রায় ৮০০ টাকা) বেশি।
বার্লিনের একটি কেবাব দোকানের কর্মী ৬৮ বছর বয়সী হালিল দুমান জানান, “সবকিছুই এখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
কাঁচামালের দাম বাড়ছে, ফলে লাভের পরিমাণও কমে যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি দাম আরও বাড়াই, তাহলে ক্রেতারা হয়তো আমাদের দোকান থেকে খাবার কেনা বন্ধ করে দেবে।
**কেবাবে জার্মান সংস্কৃতির ছোঁয়া**
জার্মানিতে কেবাব ‘ডনার’ নামে পরিচিত।
এটি মূলত তুরস্ক থেকে আসা অভিবাসীদের হাত ধরে ১৯৭০-এর দশকে জার্মানে প্রবেশ করে।
বর্তমানে এটি জার্মানির সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।
কথিত আছে, ১৯৭০-এর দশকে তুরস্কের এক শ্রমিক, মাহমুত আইগুন, বার্লিনের একটি রেলস্টেশনের কাছে প্রথম ‘ডনার’ বিক্রি করেন।
বর্তমানে জার্মানিতে প্রায় ২৯ লক্ষ তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষের বাস।
ইউনিভার্সিটি ছাত্রী নেলে ল্যাংফিল্ড জানান, তিনি পরীক্ষার পর একটি কেবাব খেতে এসেছিলেন।
তিনি শ্রমিক ধর্মঘটের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না হলেও, কেবাবের দাম বৃদ্ধি বা এর অভাবের আশঙ্কা তাকে চিন্তিত করে তুলেছে।
তিনি বলেন, “আমি সীমিত আয়ের একজন মানুষ।
সস্তা ও পেট ভরানোর মতো খাবার হিসেবে কেবাব আমার খুব প্রিয়। এটা যেন আগের মতোই থাকে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস