জার্মানির ইতিহাসে বৃহত্তম ঋণ: মেরজের ভাগ্য নির্ধারণী ভোটে কী হবে?

জার্মানির পার্লামেন্টে (বুন্দেসটাগ) বিশাল অংকের ঋণ অনুমোদন নিয়ে ভোটাভুটির প্রস্তুতি চলছে। এই প্যাকেজের মাধ্যমে দেশটির সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং দুর্বল অর্থনীতিকে চাঙা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দিনের চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্চ এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে জার্মানির ইতিহাসে এটি হবে সবচেয়ে বড় ঋণ প্রকল্প।

এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিরোধী দলগুলো এবং এমনকি মার্চে’র নিজ দলের কতিপয় সদস্যও বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন। তাদের মতে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে সংস্কারের কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা দেওয়া হয়নি।

প্রস্তাবিত ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকার সমান)। এছাড়াও, প্রস্তাবটি দ্রুততার সঙ্গে উত্থাপন করা হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

জার্মানির কট্টর-ডানপন্থী দল ‘অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড’ (এএফডি) অভিযোগ করেছে যে, আইনটি পর্যাপ্ত পর্যালোচনার সুযোগ পায়নি। হয় সংসদ সদস্যরা অথবা বাইরের বিশেষজ্ঞরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন।

মার্চ সম্ভবত ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি অবকাঠামো তহবিল তৈরি করতে চান এবং ঋণের নিয়ম শিথিল করতে আগ্রহী। বর্তমানে জার্মানির সংবিধানে এই নিয়মগুলো সংরক্ষিত রয়েছে।

তবে প্রস্তাবের পক্ষে থাকা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে মার্চে’র দল কনজারভেটিভ, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি) এবং গ্রিন পার্টি। তাদের সম্মিলিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় প্রস্তাবটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত মাসে অনুষ্ঠিত ফেডারেল নির্বাচনে মার্চে’র নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ সিডিইউ/সিএসইউ জোট জয়লাভ করে।

তবে, এই বিল পাস করতে মার্চকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। আগামী ২৫শে মার্চের মধ্যে নতুন পার্লামেন্ট গঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে বিলটি পাস করার জন্য গ্রিন পার্টির সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মার্চ গত সপ্তাহে গ্রিন পার্টির সমর্থন আদায়ে সক্ষম হন।

গ্রিন পার্টি জানায়, তারা এই শর্তে রাজি হয়েছে যে, বিশেষ তহবিলের ১০০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা) জলবায়ু এবং অর্থনৈতিক রূপান্তরের জন্য ব্যয় করা হবে।

জার্মানিতে দ্রুত একটি নতুন সরকার গঠনের জন্য কনজারভেটিভ এবং এসপিডি দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপেও জোট সরকার গঠনের তাগিদ রয়েছে।

নতুন এই জোটকে ‘বেবি গ্র্যান্ড’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে, কারণ অতীতে এই দলগুলোর মধ্যে হওয়া জোটের (গ্র্যান্ড কোয়ালিশন) মতো এতে দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ততটা শক্তিশালী নয়।

অর্থনৈতিক বাজার এই ঘটনার ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে। গ্রিন পার্টির সমর্থনের খবরে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিশাল অংকের অর্থ বিনিয়োগ জার্মানির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত করতে পারে। গত দুই বছর ধরে দেশটির জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ছিল।

তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, এই পদক্ষেপের সঙ্গে শক্তিশালী সংস্কার প্রস্তাবনা থাকতে হবে।

অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা ইফোর (Ifo) সোমবার উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে।

তারা নতুন সরকারকে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, উচ্চ জ্বালানি মূল্যের কারণে কিছু কোম্পানি জার্মানি ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।

কর্মীদের বেশি সময় কাজ করার জন্য উৎসাহিত করারও পরামর্শ দিয়েছে ইফো।

রাজনৈতিক শিক্ষা বিষয়ক একাডেমি’র অধ্যাপক উরসুলা মঞ্চ এই প্যাকেজটিকে ‘বিশাল’ এবং ‘আমূল পরিবর্তনকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, অনেক জার্মান নাগরিক এই বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।

তারা একদিকে যেমন কঠোর ঋণ নিয়ম শিথিল করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন, তেমনি বিশাল অংকের অর্থের ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *