জার্মানিতে সরকার গঠনে সমঝোতা, অনিশ্চয়তার মধ্যে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা।
জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (CDU)-এর নেতা ফ্রিডরিশ মের্জ-এর নেতৃত্বে মধ্য-বামপন্থী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (SPD)-এর সঙ্গে একটি জোট সরকার গঠনের চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে।
এই চুক্তিটি এমন এক সময়ে হলো যখন বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার মধ্যে জার্মানির অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে।
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে CDU জয়লাভ করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। এর ফলে সরকার গঠনে কয়েক সপ্তাহ ধরে SPD-এর সঙ্গে আলোচনা চলছিল।
নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (AfD)-এর উল্লেখযোগ্য উত্থান হয়, যা জোট গঠনের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল।
নতুন এই জোট সরকার গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো, জার্মানির অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা এবং বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার মধ্যে দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।
বিশেষ করে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি শুল্কের কারণে সৃষ্ট বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
মের্জ তার জোটসঙ্গীদের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসকে একটি বার্তা দেন, যেখানে তিনি জার্মানির ঘুরে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন। তিনি প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং অর্থনীতির প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
এই জোট চুক্তি জার্মানির অভ্যন্তরীণ এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। এর মাধ্যমে একটি কর্মক্ষম ও শক্তিশালী সরকার গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, জার্মানির বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা হবে এবং মধ্যমেয়াদে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করা হবে।
একই সঙ্গে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) মধ্যে সমন্বিতভাবে বাণিজ্য যুদ্ধের মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরকার গঠনের পর মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কর কমানো, কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস, বিদ্যুতের দাম কমানো, বৈদ্যুতিক গাড়ির শিল্পকে সহায়তা করা এবং বিতর্কিত সাপ্লাই চেইন আইন বাতিলের মতো নীতিগুলি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়াও, জার্মানির সাংবিধানিকভাবে সংরক্ষিত ব্যয়সীমা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে বাধা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অভিবাসীদের আগমন নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুত নাগরিকত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া বাতিলের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা আনার পরিকল্পনা করছে এই জোট সরকার।
এছাড়া, সামরিক বাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের ন্যাটো জোটে যোগদানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
তবে, মের্জের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, জনমত জরিপে AfD-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি। সম্প্রতি Ipsos-এর এক জরিপে দেখা গেছে, AfD প্রথমবারের মতো ২৫ শতাংশ ভোট পেয়ে শীর্ষে উঠেছে, যেখানে CDU-এর সমর্থন কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ শতাংশে।
এই পরিস্থিতিতে মের্জকে এখন SPD-এর সদস্যদের অনুমোদন এবং CDU-এর কনভেনশনের মাধ্যমে জোট চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে হবে।
এরপর পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জার্মানিতে সরকার গঠন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে বিভিন্ন দলের মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্যের প্রয়োজন হয়।
এই জোট সরকার গঠিত হওয়ার ফলে জার্মানির অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অভ্যন্তরীণ নীতিতে পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা