জার্মানিতে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হয়েছে, যেখানে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে চরম ডানপন্থী ‘অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড’ (এএফডি)। নতুন কোয়ালিশন সরকার গঠনের লক্ষ্যে আলোচনা চলছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ফ্রিডরিখ মেরৎস।
এই সরকারের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে কর নীতি এবং অভিবাসন বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্দেসটাগে (জার্মান সংসদ) নতুন করে ৬৩০ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে এএফডি’র আসন সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ১৫২-তে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, মধ্যপন্থী দলগুলো ইউরোপীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে দেশটির সামরিক ও আর্থিক নীতিতে পরিবর্তন আনতে চাইছে।
নতুন পার্লামেন্টের সদস্যদের বয়স ২৩ থেকে ৮৪ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী হলেন বামপন্থী দল ‘ডাই লিংক’ (বাম দল)-এর সদস্য লুক হস।
তিনি প্রতি মাসে পাওয়া ১১,০০০ ইউরোর বেশি বেতন দান করার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য হলেন এএফডি’র আলেকজান্ডার গওল্যান্ড।
২০১৮ সালে হিটলার এবং নাৎসিদের সমালোচনা করে তিনি বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন।
জার্মান নির্বাচনী আইনে সংস্কারের কারণে আগের পার্লামেন্টের তুলনায় এবারের বুন্দেসটাগে প্রায় ১০০ জন সদস্য কম রয়েছেন। নতুন সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্বও আগের চেয়ে সামান্য কমেছে।
গ্রিন পার্টিতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব সবচেয়ে বেশি, ৬১.২ শতাংশ। অন্যদিকে, এএফডিতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব সবচেয়ে কম, মাত্র ১১.৮ শতাংশ।
ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ)-এর মতো কেন্দ্রে-ডান দলগুলোতেও নারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, যথাক্রমে ২২.৬ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ।
নতুন পার্লামেন্টে অভিবাসন ব্যাকগ্রাউন্ডের (যাদের অন্তত একজন অভিভাবক জার্মান নাগরিক ছিলেন না) এমপি’র সংখ্যাও কম। মিডিয়েনডিস্ট ইন্টিগ্রেশন নামক একটি অলাভজনক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১১.৬ শতাংশ।
যেখানে সাধারণ জনগণের মধ্যে এই হার প্রায় ৩০ শতাংশ। ডাই লিংক দলের সদস্য ২৪ বছর বয়সী সাদা সালিহোভিচ বুন্দেসটাগের দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি মনে করেন, নতুন পার্লামেন্ট এখনও একটি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব করে, যা নারী, শ্রমিক, তরুণ, পূর্ব জার্মানির মানুষ এবং অভিবাসন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষদের পর্যাপ্তভাবে তুলে ধরে না।
সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেন দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য গ্রেগর জিসি। তিনি একসময় পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট শাসনের সময় সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টিতে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন।
৭৭ বছর বয়সী জিসি তার ভাষণের দৈর্ঘ্য এবং বিষয়বস্তু নিজেই নির্ধারণ করেছেন এবং বুন্দেসটাগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনিই অধিবেশন পরিচালনা করবেন।
সিডিইউ/সিএসইউ বুন্দেসটাগের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দলের কোষাধ্যক্ষ জুলিয়া ক্লকনারকে মনোনীত করেছে। গ্রিন পার্টি ক্লকনারের এই মনোনয়নের বিরোধিতা করে।
কারণ, ক্লকনার এর আগে অ্যাঞ্জেলা মের্কেলের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং এএফডি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে পরে জানা যায়, ক্লকনারের এই মিটিং বাতিল করা হয়েছে।
বর্তমানে, সিডিইউ/সিএসইউ এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসপিডি) মধ্যে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। ফ্রিডরিখ মেরৎস আসন্ন ইস্টার উৎসবের আগেই সরকার গঠন করতে আগ্রহী।
নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায়, তারা ইতিমধ্যেই গ্রিন পার্টির সমর্থন লাভ করে সংবিধান সংশোধন করতে সক্ষম হয়েছে।
এর ফলে জার্মানির ঋণসীমা শিথিল করা যাবে এবং প্রতিরক্ষা, অবকাঠামো ও জলবায়ু পরিবর্তন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করা সহজ হবে।
যদিও এএফডি এবং ডাই লিংক-এর বিরোধিতার কারণে এই প্রস্তাব পাস হওয়া কঠিন ছিল। কারণ তারা ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর বিরোধী।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান