জার্মানিতে শ্বেত শতমূলীর মরসুম: বসন্তের আগমনী বার্তা
বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই জার্মানির খাদ্য সংস্কৃতিতে আসে এক বিশেষ পরিবর্তন। শ্বেত শতমূলী (যা জার্মানিতে ‘স্পার্গেল’ নামে পরিচিত) সেখানে যেন বসন্তের দূত।
শীতের বিদায় এবং উষ্ণ আবহাওয়ার সূচনা লগ্নে এই সবজিটি জার্মানদের জীবনে এক আনন্দ নিয়ে আসে। এপ্রিল মাস থেকে শুরু করে জুন মাস পর্যন্ত, এই শ্বেত শতমূলীর মরসুম চলে।
জার্মানির রাজধানী বার্লিনের কাছে অবস্থিত, ‘বীলিৎজ’ শহরটি শ্বেত শতমূলীর জন্য সুপরিচিত। এখানকার মাটি এই সবজি চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত।
কৃষকরা একে ‘সাদা সোনা’ নামেও ডাকে, কারণ এর উজ্জ্বল সাদা রঙ এবং বাজারের উচ্চ মূল্য। মরসুমের শুরুতে প্রতি কেজি শ্বেত শতমূলীর দাম প্রায় ২,০০০ টাকার কাছাকাছি (বর্তমান বিনিময় হারে), যা পরে কমে ১,০০০ টাকার মতো হয়।
শ্বেত শতমূলীর প্রতি জার্মানদের ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করতে পারে, কিভাবে এটি পরিবেশন করা উচিত – গলানো মাখন নাকি ‘হল্যান্ডাইজ’ সস দিয়ে, স্মোকড হ্যাম বা ‘শ্নিৎজেলের’ সাথে, নাকি সেদ্ধ আলু অথবা বেকন ও পেঁয়াজ দিয়ে ভাজা আলুর সাথে!
এমনকি তারা আঙুল দিয়ে এই সবজি খাওয়া যায় কিনা, তা নিয়েও বিতর্ক করে, যদিও প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, সামান্য গরম পানিতে আঙুল ডুবিয়ে পরিষ্কার করে নিলে কোনো সমস্যা নেই।
এই সবজি শুধু খাদ্য নয়, এটি জার্মান সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইস্টার, মা দিবস বা অন্যান্য উৎসবগুলোতে শ্বেত শতমূলী পরিবেশন করা হয়।
বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে উৎসবের মেজাজে খাবার উপভোগ করে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, প্রাচীন রোমানরা শ্বেত শতমূলীকে ভালোবাসার উদ্দীপক হিসেবে বিবেচনা করত। একসময় এটি শুধুমাত্র মঠের বাগানগুলোতে জন্মাতো এবং অভিজাত শ্রেণির লোকেরা এটি খাওয়ার সুযোগ পেত।
উনিশ শতকের শেষের দিকে কৃষকরা যখন মাঠে এটি চাষ করা শুরু করে, তখন থেকে এটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়।
জার্মানিতে শ্বেত শতমূলী খাওয়ার একটি বিশেষ রীতি রয়েছে। এই সবজি মাটির নিচে জন্মানোর কারণে সূর্যের আলো থেকে রক্ষা পেতে একে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।
এর স্বাদ মিষ্টি ও হালকা বাদামের মতো। সাধারণত এটি সেদ্ধ করে খাওয়া হয়, সামান্য চিনি ও লবণ দিয়ে।
রান্নার আগে এর খোসা ছাড়ানো হয়।
জার্মানরা শ্বেত শতমূলীর উৎপাদনে এবং গ্রহণে বিশ্বে এক নম্বর। তারা বছরে প্রায় ১.৫ কেজি করে এই সবজি খায়।
জার্মানি নিজেদের চাহিদার জন্য এই সবজি উৎপাদন করে, তবে স্পেন ও ইতালির মতো দেশ থেকে এটি আমদানিও করে।
বীলিৎজের ‘যাকোবস-হফ’ নামের একটি খামারে শ্বেত শতমূলী চাষ করা হয়। সেখানকার মালিক ইউরগেন যাকোবস বলেন, “শ্বেত শতমূলী খাওয়া একটি উৎসবের মতো।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এটি বসন্তের প্রথম সবজি। সাধারণত ছুটির দিনে, পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে উৎসবের মেজাজে এটি পরিবেশন করা হয়।”
শ্বেত শতমূলীর এই সংস্কৃতি যেন আমাদের দেশের বিভিন্ন উৎসবে পিঠা বা ইলিশ মাছের মতো, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে আসে এবং মানুষের মনে আনন্দের ঢেউ তোলে।
জার্মানির এই ঐতিহ্য সত্যিই উপভোগ করার মতো।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস