পরিবেশ বাঁচাতে ঘাস-খাওয়ানো গরুর মাংস? গবেষণা যা বলছে!

ঘাস-খাওয়ানো গরুর মাংস: পরিবেশের বন্ধু নাকি ক্ষতি? নতুন গবেষণায় বিতর্ক

আজকাল পরিবেশ সচেতন মানুষের মধ্যে ঘাস-খাওয়ানো গরুর মাংস বা গ্রাস-ফেড গরুর মাংসের চাহিদা বাড়ছে। ধারণা করা হয়, এই ধরনের মাংস পরিবেশের জন্য ভালো।

কারণ, এই গরুগুলোকে কারখানায় তৈরি খাবারের বদলে ঘাস খাইয়ে বড় করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা এই ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে।

গবেষণা বলছে, ঘাস-খাওয়ানো গরুর মাংস পরিবেশের জন্য শিল্প-পদ্ধতিতে উৎপাদিত গরুর মাংসের চেয়ে খুব বেশি ভালো নয়। বরং কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঘাস-খাওয়ানো গরুগুলো ধীরে ধীরে বাড়ে। ফলে একই পরিমাণ মাংস উৎপাদন করতে বেশি গরুর প্রয়োজন হয়।

এতে বেশি জমির ব্যবহার হয় এবং মিথেন গ্যাসের নিঃসরণও বাড়ে। মিথেন একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।

গবেষক গিডন এশেল, যিনি বার্ড কলেজের পরিবেশ পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক, তার গবেষণায় এই বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করেন, ভোক্তারা ভুল তথ্যের শিকার হচ্ছেন।

বিশ্বজুড়ে গরুর মাংসের চাহিদা বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ। কারণ, গরুর মাংস উৎপাদনে প্রচুর জমি ও সম্পদের প্রয়োজন হয়।

বিশেষ করে, দক্ষিণ আমেরিকার মতো জায়গাগুলোতে যেখানে গরুর মাংস উৎপাদন বাড়ছে, সেখানে বনভূমি ধ্বংস করে গবাদি পশু পালন করা হচ্ছে।

এর ফলে কার্বন জমা রাখার প্রাকৃতিক স্থানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তবে, ঘাস-খাওয়ানো গরুর মাংসের কিছু সুবিধা আছে। যেমন, এই পদ্ধতিতে পশুদের ভালো রাখা যায় এবং স্থানীয় পরিবেশ দূষণ কম হয়।

কিন্তু গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করলে, ঘাস-খাওয়ানো গরুর মাংস পরিবেশের জন্য খুব একটা উপকারী নয়। উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেন্ডি জ্যাকসন, যিনি এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন না, তার গবেষণাতেও একই ধরনের ফল পাওয়া গেছে।

এই গবেষণা আমাদের খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে। পরিবেশ সচেতন ভোক্তাদের জন্য, গরুর মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমানো একটি ভালো উপায় হতে পারে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। তাই খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিবেশের কথা ভাবা জরুরি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *