আতঙ্কের খবর! আপনার ঘরের ধুলোয় লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্যখাতকের ভয়ংকর রাসায়নিক!

ঘরের ধুলো, যা আমাদের কাছে সামান্য বিরক্তিকর মনে হতে পারে, আসলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, এই ধুলোর কণাগুলোর মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ধুলোর মধ্যে মৃত চামড়ার কোষ, চুল, পোষা প্রাণীর লোম, কাপড়ের তন্তু, ধুলো-মাকড়সা, ছত্রাকের স্পোর, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা, পরাগ রেণু, ব্যাকটেরিয়া এবং বাইরের মাটি-কণার মতো নানা জিনিস মিশে থাকে। এছাড়াও, বিজ্ঞানীরা এখন ধুলোর মধ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন, যা খালি চোখে দেখা যায় না।

গবেষকরা ঘরের ধুলোয় ৪৫টির বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ চিহ্নিত করেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় – থ্যালেটস, ফেনল এবং ফ্লেম রিটার্ডেন্ট।

পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, ঘরোয়া ধুলোর নমুনাতে ২৫৮টি ভিন্ন রাসায়নিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই রাসায়নিকগুলোর মধ্যে রয়েছে কীটনাশক, পার- এবং পলিফ্লুরোআলকাইল পদার্থ (পিএফএএস) বা ‘চিরকালের রাসায়নিক’, সীসা এবং অন্যান্য উদ্বায়ী জৈব যৌগ।

ডিসেম্বর ২০২৪-এর ‘এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরের ধুলোর মধ্যে থাকা পিএফএএস-এর সংস্পর্শে আসা প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে এই রাসায়নিক প্রবেশের পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়া, ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ক্যান্সার’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় শিশুদের ওপর ধুলোর রাসায়নিকের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে, ৭ বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা ধুলোর মাধ্যমে ৮ ধরনের পিএফএএস-এর সংস্পর্শে এসেছে, তাদের লিউকেমিয়া (রক্তের ক্যান্সার) হওয়ার সম্ভাবনা, কম পিএফএএস-এর সংস্পর্শে আসা শিশুদের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি ছিল।

ধুলোর রাসায়নিক কীভাবে ক্ষতি করে?

ধুলোর মধ্যে পাওয়া অনেক রাসায়নিকই এন্ডোক্রাইন-ডিসরা্পটিং কেমিক্যালস (EDCs) অর্থাৎ অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি-বিনষ্টকারী রাসায়নিক। এই রাসায়নিকগুলো শরীরের হরমোনগুলোর কাজে বাধা দেয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।

এই রাসায়নিকগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস, খাদ্য গ্রহণ বা ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্পমেয়াদে এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি বা হাঁপানির সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে, ইডিসি-এর কারণে বন্ধ্যাত্ব, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, স্থূলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা, লিভার ও কিডনি রোগ, এবং মনোযোগ-ঘাটতি ব্যাধি (এডিডি) সহ স্নায়বিক ও বিকাশে সমস্যা হতে পারে।

সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কারা?

শিশুরা ধুলোর দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ তারা মেঝেতে বেশি সময় কাটায় এবং তাদের শরীরে ধুলো প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি।

গর্ভবতী মহিলাদেরও এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা উচিত নয়, কারণ এটি ভ্রূণের বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের হৃদরোগ বা ফুসফুসের রোগ আছে, তাদেরও এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ধুলো দূর করার উপায়

ঘরের ধুলো সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা কঠিন, তবে কিছু উপায় অবলম্বন করে এর পরিমাণ কমানো যেতে পারে।

  • নিয়মিত ভ্যাকুয়াম করুন: সপ্তাহে অন্তত একবার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন। ভ্যাকুয়াম করার সময়, সোফার নিচে বা কোণে জমে থাকা ধুলো পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ ব্রাশ ব্যবহার করুন।
  • উচ্চমানের এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করুন: ভালো মানের এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
  • ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন: শুকনো কাপড়ের বদলে ভেজা কাপড় বা মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন।
  • নিরাপদ ক্লিনিং পণ্য ব্যবহার করুন: ক্লিনিং পণ্যের উপাদান সম্পর্কে সচেতন থাকুন। যেসব পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান আছে, সেগুলো ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
  • শিশুদের খেলনা পরিষ্কার করুন: শিশুদের খেলনা নিয়মিত পরিষ্কার করুন। খাওয়ার আগে তাদের হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

ঘরের ধুলো কমিয়ে আপনি আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে পারেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘর পরিষ্কারের অভ্যাস বাড়ানোর ফলে, মানুষের শরীরে ফ্লেম রিটার্ডেন্ট নামক রাসায়নিকের পরিমাণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *