পশ্চিম আফ্রিকায় রাশিয়ার পক্ষে ভুয়া খবর পরিবেশনের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর্দা ফাঁস করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেখানে ‘ভূতের কলম সৈনিক’ ব্যবহার করে ফ্রান্স বিরোধী ও রাশিয়াপন্থী প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এইসব ভুয়া খবর লেখার পেছনে কলকাঠি নাড়ে রাশিয়ার একটি কুখ্যাত সংস্থা, যারা ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনেও একই ধরনের কারসাজি ঘটিয়েছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চক্রটি মূলত ভুয়া অনলাইন প্রোফাইল এবং মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করে খবর তৈরি করে। এরপর তা বিভিন্ন আফ্রিকান সংবাদ মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে প্রকাশ করা হয়।
খবরগুলোতে মূলত ফ্রান্সের সমালোচনা এবং রাশিয়ার প্রতি সমর্থন জানানো হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২০ সালে, যখন সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের (সিএআর) একজন শিক্ষক ও ফুটবল রেফারি জ্যাঁ-ক্লদ সেনদেওলি’র মৃত্যুর পর। সেনদেওলির ছবি ব্যবহার করে তৈরি করা হয় ‘গ্রেগোয়ার সিরিল ডঙ্গোবাদা’ নামের একটি ভুয়া প্রোফাইল।
ডঙ্গোবাদা নিজেকে রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি মূলত ফরাসি ভাষাভাষী আফ্রিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিবন্ধ লিখতেন।
তার লেখায় প্রায়শই ফ্রান্সকে আফ্রিকার জন্য ক্ষতিকর এবং রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতিকে উপকারী হিসেবে তুলে ধরা হতো।
আল জাজিরার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডঙ্গোবাদার কোনো অস্তিত্ব নেই। তার সামাজিক মাধ্যম প্রোফাইলগুলো তৈরি করা হয়েছে মূলত সেনদেওলির ছবি ব্যবহার করে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ডঙ্গোবাদা নামের এই ব্যক্তি অন্তত ৭৫টি নিবন্ধ লিখেছেন, যা বিভিন্ন আফ্রিকান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তদন্তে আরও জানা গেছে, ডঙ্গোবাদা একা নন। এমন আরও ১৫ জনের বেশি ‘ভূতের কলম সৈনিক’-এর সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা একই ধরনের কাজ করে আসছেন।
তাদের লেখাগুলোও ফ্রান্স বিরোধী এবং রাশিয়াপন্থী। এই লেখকদের সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, এই প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হলো আফ্রিকার দেশগুলোতে ফ্রান্সের প্রভাব কমানো এবং রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় ফ্রান্সের ক্ষমতা কমেছে এবং রাশিয়ার প্রভাব বেড়েছে।
অনেক আফ্রিকান দেশ এখন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া কৌশলগতভাবে এই অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করতে চাইছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ভুয়া খবর তৈরির পেছনে রাশিয়ার ‘ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি’ (আইআরএ)-র হাত রয়েছে। ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে এই সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছিল।
এই সংস্থাটি ভুয়া খবর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পরিচিত।
আল জাজিরার অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এই প্রচারণার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ঘানার সেথ বোয়াম্পং ওয়াইরেদু নামের এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। তিনি আগে রাশিয়ায় পড়াশোনা করেছেন এবং সেখানে নাগরিকত্ব লাভ করেন।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ওয়াইরেদু একসময় আইআরএ-র হয়ে কাজ করতেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই সমাজে বিভেদ তৈরি করতে এবং নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ভুয়া খবর ও প্রচারণার আশ্রয় নেয়।
তাদের এই কার্যক্রম আফ্রিকার দেশগুলোতেও বিস্তৃত হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা