১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাজ্যের মনোরোগ চিকিৎসার এক চাঞ্চল্যকর অধ্যায় উন্মোচন করেছেন জন স্টক তাঁর “দ্য স্লিপ রুম: আ ভেরি ব্রিটিশ মেডিক্যাল স্ক্যান্ডাল” (The Sleep Room: A Very British Medical Scandal) বইটিতে।
বইটিতে তৎকালীন সময়ে হাসপাতালের রোগীদের উপর চালানো কিছু বিতর্কিত চিকিৎসা পদ্ধতির বর্ণনা করা হয়েছে, যা পাঠকদের মনে গভীর রেখাপাত করে।
বইটির মূল বিষয় হলো, রয়্যাল ওয়াটারলু হাসপাতালের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্ধকারাচ্ছন্ন ‘স্লিপ রুম’-এর অভ্যন্তরের ঘটনা, যেখানে রোগীদের, বিশেষ করে তরুণীদের উপর চালানো হতো নৃশংস চিকিৎসা।
এই বইয়ের প্রধান চরিত্র হলেন চিকিৎসক উইলিয়াম সার্জেন্ট।
সার্জেন্ট রোগীদের মনকে ‘পরিষ্কার’ করার নামে তাঁদের উপর প্রয়োগ করতেন বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কৌশল।
এর মধ্যে ছিল দীর্ঘকাল ধরে ঘুম পাড়িয়ে রাখা (প্রোলংড নারকোসিস), ইনসুলিন শক থেরাপি, ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি) এবং ক্ষেত্রবিশেষে লবোটমির মতো অস্ত্রোপচার।
অনেক ক্ষেত্রে, রোগীদের কোনো সম্মতি ছাড়াই এই চিকিৎসাগুলো চালানো হতো।
সার্জনটের এই পদ্ধতিগুলো রোগীদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দিত।
বইটিতে সার্জেন্টের চিকিৎসা পদ্ধতির শিকার হওয়া কয়েকজন নারীর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
তাঁদের মধ্যে সেলিয়া ইমরি নামক একজন অভিনেত্রীও ছিলেন, যিনি ১৪ বছর বয়সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
তাঁর মতে, সেই সময়টা ছিল “যেন একটি বন্দী শিবিরের মতো”।
সার্জেন্টের এই “ভয়ঙ্কর” চিকিৎসার কারণে তাঁর আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা প্রায় ছিল না বললেই চলে।
বইটিতে সার্জেন্টের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের আরও কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি রোগীদের উপর যৌন নিপীড়ন করেছেন কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না।
তবে অন্তত একজন নারী জেনারেল মেডিক্যাল কাউন্সিলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
জন স্টকের লেখায় সার্জেন্টকে একজন প্রভাবশালী, ক্ষমতাধর এবং নিষ্ঠুর ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
তিনি ছিলেন তথাকথিত ‘বৈপ্লবিক’ মানসিকতার একজন মানুষ, যিনি রোগীদের আরোগ্য লাভের নামে তাঁদের উপর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন।
এছাড়াও, বইটিতে সার্জেন্টের সঙ্গে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৫, এমআই৬ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর (CIA) সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
ধারণা করা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ট্রমা-গ্রস্ত সৈন্যদের চিকিৎসা করার সময় সার্জেন্ট মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ (mind control) সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন।
এর ফলস্বরূপ, তিনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।
তবে, এই বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায়, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো এখনো পর্যন্ত সন্দেহের পর্যায়েই রয়েছে।
আলোচিত বইটি মনোচিকিৎসার নামে রোগীদের উপর চালানো নৃশংসতা এবং নৈতিকতার অবক্ষয়ের এক ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরেছে।
এটি শুধু একটি চিকিৎসা-সংক্রান্ত কেলেঙ্কারিই নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের নামে রোগীদের উপর অত্যাচারের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।
তথ্যসূত্র: The Guardian