যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি, মিসৌরি ও ভার্জিনিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে ২৮ জনের মৃত্যু, বিপর্যস্ত জনজীবন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে সম্প্রতি আঘাত হানা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮ জনে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেনটাকি অঙ্গরাজ্য, যেখানে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, মিসৌরিতে ৭ জন এবং ভার্জিনিয়ায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
কেনটাকির লনডন শহরে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। সেখানকার বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য সম্পদের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রিয়জনদের স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে ফিরছেন। অনেক পরিবার তাদের চোখের সামনে সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর (National Weather Service) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে কর্মকর্তাদের মধ্যে কর্মী সংকট ছিল। কেনটাকির জ্যাকসন শহরের আবহাওয়া অফিসের ২৫ শতাংশ পদ শূন্য ছিল, লুইসভিলের অফিসে ২৯ শতাংশ এবং সেন্ট লুইসে ১৬ শতাংশ পদ খালি ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০ শতাংশের বেশি শূন্যপদ থাকলে তা জরুরি অবস্থার মোকাবিলায় বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
মিসৌরির সেন্ট লুইসে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৮ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও, শহরের পাঁচ হাজারের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় মেয়র কারা স্পেন্সার এই ঘটনাকে হৃদয়বিদারক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। স্কট কাউন্টিতেও (St. Louis) ঘূর্ণিঝড়ে দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সেখানে বহু বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।
কেনটাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেশিয়ার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ফেডারেল সাহায্য পাঠানোর জন্য আবেদন করা হবে। তিনি নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি, মৃতের পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তারও ঘোষণা করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর আরও জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে এই অঞ্চলে আবারও ভারী বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১,২০০টির মতো টর্নেডো আঘাত হানে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে যেখানে ‘টর্নেডো অ্যালির’ (Tornado Alley) কারণে পরিচিত ওকলাহোমা, কানসাস এবং টেক্সাসে ঘূর্ণিঝড় বেশি হতো, সেখানে বর্তমানে ঘনবসতিপূর্ণ ও গাছপালাপূর্ণ এলাকাগুলোতে এর প্রবণতা বাড়ছে।
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আরও একবার স্পষ্ট হলো।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস