বিশ্বের বৃহত্তম বাইসাইকেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, জায়ান্ট, তাইওয়ানে উৎপাদিত তাদের কিছু পণ্যের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি বাণিজ্যে সম্ভাব্য বিলম্বের বিষয়ে সতর্ক করেছে। মার্কিন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক শোষণের অভিযোগের ভিত্তিতে, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগ (সিবিপি) বুধবার এক আদেশে তাইওয়ানে তৈরি জায়ান্ট বাইসাইকেল, যন্ত্রাংশ এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের চালান আটকে দেওয়ার ঘোষণা করে। সিবিপি’র তদন্তে শ্রমিক শোষণের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে, জায়ান্ট কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তারা কোনো ধরনের অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। জায়ান্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবে এবং সিবিপির সাথে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
সিবিপি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা জায়ান্টের বিরুদ্ধে দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া, শ্রমিকদের খারাপ কর্মপরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা, ঋণের বোঝা তৈরি করা, বেতন আটকে রাখা এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করানোর মতো অভিযোগ এনেছে। তবে, বিস্তারিত কোনো প্রমাণ তারা এখনো সরবরাহ করেনি।
সিবিপি’র পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, জায়ান্ট এই ধরনের শোষণ থেকে লাভবান হয়েছে, যার ফলে তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি হয়েছে এবং এর মাধ্যমে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কয়েক মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে।
অন্যদিকে, জায়ান্ট কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, সিবিপি’র তদন্তের বিষয়ে তাদের আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। জায়ান্ট গ্রুপের মুখপাত্র কেন লি জানিয়েছেন, “আমাদের জানা মতে, মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো তদন্ত, সাক্ষাৎকার, সাইট পরিদর্শন বা তথ্যের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ আসেনি।
জায়ান্ট কর্তৃপক্ষ মানবাধিকার এবং শ্রমিক অধিকার রক্ষায় দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানায়। তারা অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া এবং তৃতীয় পক্ষের নিরীক্ষার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে।
এই নিষেধাজ্ঞা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাইওয়ান সরকার জায়ান্টকে এই বিষয়ে সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
জায়ান্ট বিশ্বের বৃহত্তম বাইসাইকেল প্রস্তুতকারক কোম্পানি। তাদের ওয়েবসাইট অনুসারে, গত বছর তাদের ব্যবসার পরিমাণ ছিল প্রায় ২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
বর্তমানে তাদের বিশ্বজুড়ে ১৩,০০০ এর বেশি কর্মী কাজ করে এবং গত বছর তারা প্রায় ৪০ লক্ষ বাইসাইকেল বিক্রি করেছে।
তাইওয়ানের অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা শ্রমিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে জায়ান্টকে দ্রুত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে। তাইওয়ান উন্নত অর্থনীতির দেশ এবং প্রযুক্তি ও গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে মৎস্যশিল্পের মতো শিল্পে অভিবাসী শ্রমিকদের উপর শ্রম শোষণের অভিযোগ অতীতে শোনা গেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন