বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট: চরম উদ্বেগের চিত্র জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের সহায়তায় প্রস্তুতকৃত ‘২০২৫ সালের বৈশ্বিক খাদ্য সংকট প্রতিবেদন’-এ (Global Report on Food Crises – GFRC) বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের ৫৩টি দেশ ও অঞ্চলে ২৯ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার। প্রতিবেদনটি বলছে, সংঘাত, চরম আবহাওয়া এবং অর্থনৈতিক ধাক্কা—এগুলোই খাদ্য সংকটের প্রধান কারণ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৫ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে জনসংখ্যার ২২.৬ শতাংশ মানুষ খাদ্য সংকটের চরম পর্যায়ে রয়েছে।
সংঘাতের কারণে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে, যার মধ্যে গাজা, দক্ষিণ সুদান, হাইতি ও মালির মতো অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা ‘বিপর্যয়কর’ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সুদানে দুর্ভিক্ষের প্রমাণও পাওয়া গেছে।
শুধু সংঘাতই নয়, মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে ১৫টি দেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে।
এর মধ্যে সিরিয়া ও ইয়েমেন অন্যতম। এছাড়া, এল নিনোর প্রভাবে সৃষ্ট বন্যা ও খরাসহ চরম আবহাওয়ার কারণে ১৮টি দেশে ৯ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই প্রতিবেদনকে ‘একটি বিপদজনক বিশ্বের প্রতি কঠোর অভিযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, গাজা ও সুদান থেকে শুরু করে ইয়েমেন ও মালির মতো দেশগুলোতে সংঘাত এবং অন্যান্য কারণে সৃষ্ট ক্ষুধা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা পরিবারগুলোকে অনাহারের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।
গুতেরেস আরও যোগ করেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে ক্ষুধা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা খালি পেটে থাকা মানুষের প্রতি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
শুধু তাই নয়, উচ্চ মাত্রার খাদ্য সংকটে থাকা ২৬টি দেশে পুষ্টিরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
সুদানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে দারফুরের জামজাম ক্যাম্পে।
ফিলিস্তিনেও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হয়েছিল, তবে মানবিক সহায়তার কারণে তা এড়ানো গেছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেন, কেনিয়া ও গুয়াতেমালার মতো ১৫টি দেশে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের কারণে খাদ্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
তবে প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, প্রধান দাতাগোষ্ঠীগুলো মানবিক সহায়তার জন্য তহবিল উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে, যা ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।
বিশ্বের এই খাদ্য সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
যদিও খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তবুও আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
তাই, বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা করা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা