পৃথিবীর বুকে ভয়ঙ্কর পরিবর্তনে জলবায়ু! এখনই কি ব্যবস্থা?

বিশ্ব উষ্ণায়ন: পৃথিবীর বুকে এক গভীর সংকট

গত কয়েক বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত গতিতে বাড়ছে, যা আমাদের জন্য এক অশনি সংকেত। ২০২২ সাল ছিল রেকর্ড করা উষ্ণতম বছরগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই হারে তাপমাত্রা বাড়লে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও বাড়বে, যা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এরই মধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে বিরূপ প্রভাব।

শিল্প বিপ্লবের পর থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) এবং মিথেন (CH4)-এর মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ।

এই গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে জমা হয়ে সূর্যের তাপ ধরে রাখে, ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। কলকারখানা, যানবাহন এবং বনভূমি ধ্বংসের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে, অন্যদিকে, গবাদি পশুর পালন ও ল্যান্ডফিলের কারণে বাড়ছে মিথেন গ্যাসের উত্পাদন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক দশকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়েছে। এই হারে উষ্ণতা বাড়তে থাকলে মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলতে শুরু করবে।

আর্কটিক অঞ্চল অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে চারগুণ বেশি গতিতে উষ্ণ হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে, যা বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা—এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যাও বেড়ে যাবে, যা কৃষি ও জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরনেও পরিবর্তন আসছে। প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বাতাসে ৭ শতাংশ বেশি জলীয় বাষ্প জমা হয়, যার ফলস্বরূপ আকস্মিক বন্যা ও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলছেন। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

যানবাহনে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি। এছাড়া, কার্বন নিঃসরণ কমাতে গাছ লাগানো এবং সমুদ্র, জলাভূমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করা দরকার।

জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা, এবং এর সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার, বিভিন্ন সংস্থা এবং সাধারণ মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে।

আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করতে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *