আতঙ্কে বিশ্ব! জলবায়ু পরিবর্তনে চরম বিপর্যয়, বাড়ছে বন্যা ও খরা!

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির আবর্তন প্রক্রিয়া চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (World Meteorological Organization – WMO)-এর এক নতুন প্রতিবেদনে এই উদ্বেগের চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরা ও বন্যার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো এখন আরও বেশি ঘটছে, যা বিশ্ব অর্থনীতি ও সমাজের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর বিশ্বের নদী অববাহিকাগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশেই স্বাভাবিক অবস্থা ছিল না। কোথাও অতিরিক্ত জল ছিল, আবার কোথাও দেখা দিয়েছে তীব্র জল সংকট।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এমনটা হচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীর জলীয় বাষ্প তৈরি ও তা পরিবহনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে।

২০২৩ সালে বিশ্বের অনেক অঞ্চলে তীব্র খরা দেখা গেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বড় প্রমাণ। বিশেষ করে, আমাজন নদীর জলস্তর রেকর্ড পরিমাণে কমে গিয়েছিল।

আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে দেখা দেয় চরম খরা, যার ফলস্বরূপ সেখানকার সরকারগুলোকে হাতিসহ শত শত বন্য প্রাণী মেরে ফেলতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ওকলাহোমা এবং কানসাসের মতো অনেক এলাকায় শস্য উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে।

অন্যদিকে, একই সময়ে বিশ্বের অনেক জায়গায় বন্যাও দেখা গেছে। ইউরোপে ২০১১ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে।

হারিকেন হেলেনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে ব্যাপক বন্যা হয়, যাতে অন্তত ২৩০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় ব্যাপক বন্যায় প্রায় ১,৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

শুধু তাই নয়, বিশ্বের হিমবাহগুলোও দ্রুত গলতে শুরু করেছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে।

হিমবাহের বরফ গলার কারণে অনেক দেশ, যারা জলবিদ্যুৎ, সেচ এবং খাবার পানির জন্য হিমবাহের ওপর নির্ভরশীল, তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। গত তিন বছর ধরে হিমবাহগুলো ব্যাপক হারে বরফ হারাচ্ছে।

শুধু ২০২৩ সালেই প্রায় ৪৫0 গিগাটন বরফ গলেছে, যা প্রায় ১৮০ মিলিয়ন অলিম্পিক সুইমিং পুলের সমান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলচক্রের এই পরিবর্তন জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা তৈরি করছে এবং এর ফলে বিভিন্ন দেশে উত্তেজনা ও সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।

যদিও এর অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন, তবে শুধুমাত্র গত বছরে বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জল আমাদের সমাজকে টিকিয়ে রাখে, অর্থনীতিকে সচল রাখে এবং পরিবেশকে স্থিতিশীল করে।

সেলেস্তে সাউলো

কিন্তু বিশ্বের জলসম্পদ এখন ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে এবং একই সঙ্গে জল সম্পর্কিত চরম দুর্যোগগুলো জীবন ও জীবিকার ওপর আরও বেশি প্রভাব ফেলছে।”

বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানে বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকি অনেক বেশি।

ভবিষ্যতে পানির এই ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ বাংলাদেশের কৃষি, জীবনযাত্রা ও অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *