মহাবিশ্বে সোনার রহস্য? বিজ্ঞানীরা কি সমাধান খুঁজে পেলেন?

মহাকাশে সোনার রহস্য! বিজ্ঞানীরা কি পেলেন কূলকিনারা?

সোনা, মূল্যবান এই ধাতুটির সৃষ্টিরহস্য সবসময়ই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের বিষয়। কীভাবে তৈরি হয় এই উজ্জ্বল ধাতু, তা জানতে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চলছে।

সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় জানা গেছে, সম্ভবত অতি শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্রযুক্ত নিউট্রন নক্ষত্র, যা ‘ম্যাগনেটার’ নামে পরিচিত, তাদের বিস্ফোরন থেকেই সৃষ্টি হয় সোনার মতো ভারী মৌলগুলো।

গবেষণাটি বলছে, মহাকাশে সোনার উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে এতদিন যে ধারণা ছিল, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই ম্যাগনেটারগুলো। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ড. অনিরুদ্ধ পাটোয়ার নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী নাসা (NASA) এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (European Space Agency) পুরনো টেলিস্কোপ ডেটা বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন।

তাঁদের গবেষণা ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

সাধারণত, বিশাল ভরের নক্ষত্রের বিস্ফোরণের ফলে নিউট্রন নক্ষত্রের সৃষ্টি হয়। এই নক্ষত্রগুলো অত্যন্ত ঘন এবং শক্তিশালী মহাকর্ষীয় টানে আবদ্ধ থাকে।

কিছু নিউট্রন নক্ষত্রের আবার অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র থাকে, যাদের ম্যাগনেটার বলা হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ম্যাগনেটারগুলো সম্ভবত সোনার মতো ভারী মৌল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যাগনেটারের শক্তিশালী বিস্ফোরণ বা ‘বিশাল ফ্লেয়ার’-এর (giant flare) মাধ্যমে ভারী মৌলগুলো নির্গত হয়। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন, গ্যালাক্সিতে লোহার চেয়ে ভারী মৌলের প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করে এই ম্যাগনেটার ফ্লেয়ারগুলি।

আগে মনে করা হতো, দুটি নিউট্রন নক্ষত্রের সংঘর্ষের ফলে সোনার জন্ম হয়। এই সংঘর্ষকে ‘কিলো-নোভা’ (kilonova) বলা হয়।

তবে নতুন এই গবেষণা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। গবেষকদের মতে, মহাবিশ্বের শুরুতে যখন প্রথম ম্যাগনেটার তৈরি হয়েছিল, সম্ভবত তখনই সোনার সৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল।

এই গবেষণার ফলাফল আরও ভালোভাবে জানতে নাসা ২০২৩ সালে ‘কম্পটন স্পেকট্রোমিটার অ্যান্ড ইমেজার’ (COSI) নামে একটি নতুন মিশন চালু করতে যাচ্ছে।

এই টেলিস্কোপটি ম্যাগনেটার ফ্লেয়ারের মতো মহাজাগতিক ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করবে এবং এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সোনার উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন। এটি মহাকাশে ভারী মৌলগুলোর উৎস খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।

সোনার এই সৃষ্টিরহস্য উন্মোচন একদিকে যেমন বিজ্ঞানীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত, তেমনি সাধারণ মানুষের মনেও তৈরি করে আগ্রহ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সোনার গুরুত্ব অনেক, গহনা থেকে শুরু করে বিনিয়োগ—সবার কাছেই এর কদর রয়েছে।

তাই মহাকাশে এর উৎপত্তির এই নতুন আবিষ্কার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *