স্বর্ণের দামে উল্লম্ফন, কমে যাচ্ছে মার্কিন ডলারের দাম।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে নজিরবিহীন উত্থান দেখা যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩৫০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। একই সময়ে, মার্কিন ডলারের দর উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়ে তিন বছরের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলের প্রতি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনামূলক মন্তব্যের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, যা এই অস্থিরতার মূল কারণ।
মঙ্গলবার সকালে সোনার এই নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। এর আগে, চলতি বছরের শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২৬২৩ ডলার। বিশ্লেষকদের ধারণা, খুব শীঘ্রই সোনার দাম ৪০০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। সাধারণত, বাজারের অস্থিরতার সময়ে মার্কিন ডলার এবং সরকারি বন্ডকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অস্থিরতার কারণ হওয়ায়, বিনিয়োগকারীরা এখন সোনার দিকে ঝুঁকছেন।
এই পরিস্থিতিতে, ওয়াল স্ট্রিটে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। সোমবার, ডাউ জোনস প্রায় ১০০০ পয়েন্ট বা ২.৫% হারায়, যা ১৯৩২ সালের এপ্রিল মাসের পর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি। বাজারের ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন, কারণ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফেডারেল রিজার্ভ প্রধান পাওয়েলকে সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে ‘দেরী’ করার জন্য তীব্র সমালোচনা করেছেন।
ডলারের দরপতনের কারণে অন্যান্য প্রধান মুদ্রার বিপরীতে এর মূল্য কমে গেছে। মঙ্গলবার সকালে ডলারের দাম মার্চ ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়। পরবর্তীতে অবশ্য সামান্য বৃদ্ধি দেখা যায়। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের ক্রমাগত মন্তব্যের কারণে ডলার, মার্কিন ট্রেজারি এবং ওয়াল স্ট্রিটে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। তাঁদের আশঙ্কা, ফেডারেল রিজার্ভ প্রধানকে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যদি বরখাস্ত করা হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ে আরও বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে, ব্রিটিশ পাউন্ড ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়ে সাত মাসের সর্বোচ্চ ১.৩৪২৩ ডলারে পৌঁছেছে। ২ এপ্রিল ‘মুক্তি দিবস’-এর পর থেকে পাউন্ড ডলারের বিপরীতে টানা ১০ দিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে, যা গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবল ট্রাম্প ও পাওয়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি আর্থিক ও মুদ্রানীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি বড় সতর্কবার্তা—আস্থা হ্রাস। সোনার দাম বাড়ার পাশাপাশি, বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়তে পারে। বিশেষ করে, যারা ডলার ব্যবহার করে ব্যবসা করেন এবং প্রবাস থেকে রেমিট্যান্স পাঠান, তাঁদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
সোনার দামের এই ঊর্ধ্বগতি এবং ডলারের দর পতনের কারণগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতন থাকা জরুরি।
তথ্য সূত্র: The Guardian