সোনার দামে ঊর্ধ্বগতি, উদ্বেগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা, প্রভাব বাংলাদেশে?
বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা এবং সেই সাথে সোনার দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, এই দুইয়ে মিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জুয়েলারি ব্যবসায় এক নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের সেন্ট ভিনসেন্ট জুয়েলারি সেন্টারের মতো বড় বাজারগুলোতে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পুরোনো গয়না গলিয়ে দ্রুত টাকা পাওয়ার জন্য এবং নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনা কেনার হিড়িক পড়েছে সেখানে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বাজারে এর প্রভাব কী, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেখানকার জুয়েলারি দোকানগুলোতে এখন পুরোনো গয়না ভাঙানোর হিড়িক লেগেছে। অনেক মানুষ তাদের পুরনো সোনার গয়না, এমনকি পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে পাওয়া জিনিসপত্রও বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এর প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কায় মানুষ এখন সোনার দিকে ঝুঁকছে। এছাড়াও, মার্কিন ডলারের দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুল্কের পরিবর্তনের কারণেও অনেকে সোনাকে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে দেখছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বর্তমানে সোনার দাম এতটাই বেড়েছে যে, অনেক গ্রাহক তাদের পুরনো দিনের বিয়ের গয়না এবং অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন গলিয়ে ফেলছেন। একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, ১৪ ক্যারেটের সোনার একটি ব্রেসলেট, যার কারুকার্য করা ছিল, সেটি গলিয়ে প্রায় ৩,২০০ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩,৫৪,০০০ টাকা) পাওয়া গেছে।
তবে, ওই জুয়েলারি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে সেই ধরনের গয়না গলানোর বদলে সেগুলোর ঐতিহাসিক এবং শৈল্পিক মূল্য দেন।
অন্যদিকে, সোনার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরাও এই পরিস্থিতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পেনসিলভানিয়ার একটি সোনার দোকানের মালিক জানিয়েছেন, তাদের দোকানে এখন সোনার কেনাবেচা অনেক বেড়েছে।
অনেকে দ্রুত লাভের আশায় সোনা কিনছেন, আবার কেউ কেউ পুরনো গয়না বিক্রি করে নগদ টাকা নিচ্ছেন।
তবে, এই পরিস্থিতিতে সব ব্যবসায়ীর জন্য ভালো খবর নেই। যারা বিদেশ থেকে, যেমন ইতালি, তুরস্ক বা চীন থেকে গয়নার উপাদান আমদানি করেন, তাদের লাভের মার্জিন কমে গেছে।
সোনার উচ্চ মূল্য এবং অতিরিক্ত শুল্কের কারণে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সমস্যা হচ্ছে। একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আগে যে সোনার ব্রেসলেট ৬০০ ডলারে (প্রায় ৬৬,০০০ টাকা) বিক্রি হতো, এখন সেটি বিক্রি করতে হচ্ছে ৯০০ ডলারে (প্রায় ৯৯,০০০ টাকা)।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সোনার দাম আরও বাড়তে পারে। নিউইয়র্কের একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সোনার দাম প্রতি ট্রয় আউন্সে ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ ডলারে (প্রায় ৪,৪৪,০০০ থেকে ৫,৫৫,০০০ টাকা) পৌঁছাতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের বাজারে কতটা প্রভাব ফেলবে? আমাদের দেশে সোনার গয়নার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে বিয়ে এবং বিভিন্ন উৎসবে এর ব্যবহার অপরিহার্য।
বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বাড়লে, স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়বে। এতে করে সোনার গয়নার দাম আরও বাড়তে পারে, যা ক্রেতাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।
একই সাথে, অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা বাইরে থেকে সোনা আমদানি করেন, তাদের ব্যবসাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
সুতরাং, বিশ্ব বাজারের এই অস্থিরতা এবং সোনার দামের ঊর্ধ্বগতি একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে, তেমনই বাংলাদেশের বাজারেও এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ভবিষ্যতে সোনার দাম কোন দিকে যায় এবং এর প্রভাব আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে কতটা গভীর হয়, সেটি এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস