বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), যা বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানের বাজারে এক গভীর প্রভাব ফেলছে। উন্নত দেশগুলোতে, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে, কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা বাড়ছে, যা শ্বেত-পোশাকধারী কর্মীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেটা, অ্যামাজন, ইউটিউবের মতো বড় বড় কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই কর্মী ছাঁটাই করেছে, যেখানে এআইকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, গোল্ডম্যান স্যাকস-এর প্রধান নির্বাহী ডেভিড সলোমন মনে করেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতি এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেবে।
সলোমনের মতে, প্রযুক্তির অগ্রগতি নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে। তিনি শিল্প বিপ্লবের উদাহরণ টেনে বলেন, বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে যেমন কর্মসংস্থানের ধরনে পরিবর্তন এসেছিল, তেমনই এআই-এর কারণেও আসবে।
যদিও এই পরিবর্তন কিছু মানুষের জন্য কঠিন হতে পারে, তবে অর্থনীতি নমনীয় এবং নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম।
তবে, এআই-এর দ্রুত অগ্রগতি একটি উদ্বেগের বিষয়। গোল্ডম্যান স্যাকস-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের ৩৭ শতাংশ ক্লায়েন্ট বর্তমানে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এআই ব্যবহার করছে এবং আগামী তিন বছরে এই সংখ্যা ৭৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
জনপ্রিয় চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’র ব্যাপক ব্যবহারও এর প্রমাণ। নভেম্বরে চালু হওয়ার পর, এই প্ল্যাটফর্মটিতে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮০ কোটি ব্যবহারকারী সক্রিয় রয়েছে।
এআই-এর এই দ্রুতগতির কারণে কর্মসংস্থান বাজারে পরিবর্তন দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জ্যাসি জানিয়েছেন, যদিও তাদের কর্মী ছাঁটাইয়ের মূল কারণ এআই ছিল না, তবে ভবিষ্যতে তারা তাদের কর্পোরেট কর্মীবাহিনী কমাতে এআই-এর সাহায্য নেবে।
অনলাইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘চেগ’ও (Chegg) একই কারণে তাদের কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত, এআই-এর কারণে ১৭,৩৭৫ জন কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন। তবে, এই সংখ্যাটি সম্ভবত প্রকৃত পরিস্থিতির চেয়ে কম।
কারণ, অনেক কোম্পানি প্রযুক্তিগত উন্নতির কথা উল্লেখ করে কর্মী ছাঁটাই করেছে, যার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে এআই জড়িত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, ‘অ্যানথ্রপিক’-এর প্রধান নির্বাহী দারিও আমোদি সতর্ক করেছেন, এআই শ্বেত-পোশাকধারী কর্মীদের মধ্যে এন্ট্রি-লেভেল চাকরির অর্ধেক পর্যন্ত বিলুপ্ত করতে পারে, যা বেকারত্বের হার ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলও স্বীকার করেছেন, অনেক কোম্পানি এআই-এর কারণে কর্মী ছাঁটাই করছে অথবা নতুন কর্মী নিয়োগ কমিয়ে দিচ্ছে।
গোল্ডম্যান স্যাকস-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তাদের বিনিয়োগ ব্যাংকারদের মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ মার্কিন কোম্পানি এআই-এর কারণে কর্মী সংখ্যা কমাচ্ছে। তবে, প্রযুক্তি, মিডিয়া এবং টেলিকম কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এই হার ৩১ শতাংশ।
গোল্ডম্যান স্যাকস-এর হিসাব অনুযায়ী, আগামী এক বছরে এআই-এর কারণে কর্মী সংখ্যায় ৪ শতাংশ এবং তিন বছরের মধ্যে ১১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস হতে পারে, বিশেষ করে গ্রাহক পরিষেবা বিভাগে।
এআই-এর উত্থান বাজারের অস্থিরতাও বাড়াচ্ছে। ডেভিড সলোমন মনে করেন, এআই-এর প্রসারের ফলে অনেক ভালো কোম্পানি তৈরি হবে, তবে এর মূল্যায়ন বেশি হলে একটা সময়ে তা কমেও যেতে পারে।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই প্রযুক্তি কর্মসংস্থান বাজারে পরিবর্তন আনবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং নতুন দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন