গনোরিয়ার ত্রাসে মুক্তি! নতুন অ্যান্টিবায়োটিক: আলোচনা

নতুন অ্যান্টিবায়োটিক, গনোরিয়ার চিকিৎসায় আশা দেখাচ্ছে: বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশে যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা এখনো অনেক ক্ষেত্রে একটি স্পর্শকাতর বিষয়। তবে, গনোরিয়া বা প্রমেহ রোগের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাবের কারণে এর চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।

সম্প্রতি, একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গনোরিয়ার চিকিৎসায় সাফল্যের ইঙ্গিত দিয়েছে, যা চিকিৎসা জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।

গবেষণা বলছে, নতুন অ্যান্টিবায়োটিক, ‘গেপোটাইডাসিন’ (Gepotidacin) পুরনো চিকিৎসার তুলনায় অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে। এই ওষুধটি ইনজেকশনের পরিবর্তে মুখে খাওয়ার (oral) মাধ্যমে গ্রহণ করা যাবে, যা রোগীদের জন্য চিকিৎসা আরও সহজ করবে।

বর্তমানে গনোরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে, কারণ ব্যাকটেরিয়ার (bacteria) অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ছে। তাই, গেপোটাইডাসিন এই রোগের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) ইতিমধ্যে নারীদের প্রস্রাবের সংক্রমণ (UTI)-এর চিকিৎসায় গেপোটাইডাসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এখন, এটি গনোরিয়ার চিকিৎসায়ও কার্যকর কিনা, তা নিয়ে গবেষণা চলছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গনোরিয়ার চিকিৎসায় নতুন ওষুধ আসাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ফলে চিকিৎসকদের হাতে আরও বিকল্প থাকবে।

গনোরিয়ার চিকিৎসায় গেপোটাইডাসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, মেক্সিকো, স্পেন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৬০০ জনের বেশি রোগীর ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, গেপোটাইডাসিন বর্তমান প্রচলিত চিকিৎসার মতোই কার্যকর।

গেপোটাইডাসিন গ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে ৯২.৬ শতাংশ রোগী রোগমুক্ত হয়েছেন, যেখানে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই হার ছিল ৯১.২ শতাংশ।

চিকিৎসকরা বলছেন, গেপোটাইডাসিনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি মুখে খাওয়ার ওষুধ, ফলে রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমবে। বিশেষ করে, যারা উপসর্গবিহীন (asymptomatic) রোগী, তাদের জন্য এই চিকিৎসা খুবই উপযোগী হবে।

গেপোটাইডাসিন ব্যবহারের ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, যেমন – ডায়রিয়া বা বমি বমি ভাব। তবে, এগুলো সাধারণত মৃদু প্রকৃতির হয়ে থাকে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, গেপোটাইডাসিনের কার্যকারিতা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর পরীক্ষা করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নারী এবং ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পুরুষ এবং শ্বেতাঙ্গ।

তাই, এই ওষুধটি সবার জন্য কতটা উপযোগী, তা জানতে আরও বিস্তারিত গবেষণা দরকার।

গেপোটাইডাসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা GSK জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধটি সরবরাহ করা হলে, এর দাম নির্ধারণ করা হবে, যা রোগীদের জন্য উপকারী হবে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এটি বাজারে পাওয়া যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গেপোটাইডাসিন গনোরিয়ার চিকিৎসায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে, ওষুধটি ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতে ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হতে পারে কিনা, সে বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে।

গনোরিয়ার চিকিৎসা সহজলভ্য হলে, এটি রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে, বাংলাদেশে যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *