গুড ফ্রাইডে: কেন এই দিনে এত শোক?

শুভ শুক্রবার: শোক আর শ্রদ্ধার এক খ্রিস্টান উৎসব

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য গুড ফ্রাইডে বা শুভ শুক্রবার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে তারা যিশু খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার শোক পালন করে। এটি ইস্টার সানডে বা পুনরুত্থান দিবসের আগে পালিত হয়, যা খ্রিস্টানদের পবিত্র সপ্তাহের একটি অংশ।

এই বিশেষ দিনটির ইতিহাস, তাৎপর্য এবং বিশ্বজুড়ে এর উদযাপন সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

গুড ফ্রাইডে আসলে কী?

গুড ফ্রাইডে হলো সেই দিন, যেদিন যিশু খ্রিস্টকে রোমান সাম্রাজ্যের নির্দেশে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, এই শোকের দিনটিকে কেন “শুভ” বলা হয়?

ধর্মতত্ত্ববিদদের মতে, “শুভ” শব্দটি এখানে “পবিত্র” বা “মহিমান্বিত” অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, এই দিনটি যিশুর আত্মত্যাগের কারণে “পবিত্র” ও “গুরুত্বপূর্ণ”।

যিশুর জীবন ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ঐতিহাসিকদের মতে, যিশু খ্রিস্ট প্রথম শতকে বর্তমান ইসরায়েল অঞ্চলে বাস করতেন। সেই সময়ে এই অঞ্চলের শাসক ছিল রোমান সাম্রাজ্য। যিশু তাঁর ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে অনুসারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

ইহুদিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব “পাসওভার”-এর সময় যিশুকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রোমান গভর্ণর Pontius Pilate-এর আদেশে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। অনেকে মনে করেন, যিশুর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছিল, যা তাঁর মৃত্যুদণ্ডের কারণ হয়।

গুড ফ্রাইডের তারিখ নির্ধারণের জটিলতা

গুড ফ্রাইডের সঠিক তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়। কারণ, এটি ইস্টার সানডের আগে পালিত হয়। ইস্টার সানডে আবার চান্দ্র ক্যালেন্ডারের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।

বিভিন্ন খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তারিখ গণনার ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। সাধারণভাবে, ইস্টার হলো সেই রবিবার, যা বসন্ত বিষুবের (spring equinox) পরের প্রথম পূর্ণিমার পর আসে।

তবে অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তারিখের কিছু পার্থক্য থাকে।

শুভ শুক্রবারের তাৎপর্য

গুড ফ্রাইডে খ্রিস্টানদের জন্য শোকের দিন। এই দিনে তারা উপাসনায় অংশ নেয় এবং অনেকে উপবাস করে।

ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা এই দিনে মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। বিভিন্ন স্থানে এই দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। একসময় যিশুর জীবনের ঘটনা অবলম্বনে “প্যাশন প্লে” নামে পরিচিত নাটক মঞ্চস্থ করা হতো।

বিশ্বজুড়ে গুড ফ্রাইডের উদযাপন

বিশ্বজুড়ে গুড ফ্রাইডে বিভিন্ন রীতিতে পালিত হয়। অনেক দেশে এই দিনে শোকমিছিল বের হয়। উদাহরণস্বরূপ, গুয়াতেমালায় কালো পোশাক পরে শোক পালন করা হয়।

জ্যামাইকাতে এই দিনে ডিমের কুসুমের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা করা হয়। এই উৎসবের মাধ্যমে, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যিশুর আত্মত্যাগ স্মরণ করে এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

গুড ফ্রাইডে ও ইস্টার

গুড ফ্রাইডের ঘটনার পরেই আসে ইস্টার সানডে। খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুসারে, যিশু ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার তৃতীয় দিনে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। এই পুনরুত্থান খ্রিস্টানদের জন্য নতুন জীবনের প্রতীক।

উপসংহার

গুড ফ্রাইডে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য গভীর শোক ও আত্মত্যাগের দিন। এই দিনে তারা যিশুর প্রতি তাদের ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই দিনের উদযাপন ভিন্ন হলেও, এর মূল তাৎপর্য একই থাকে—যিশুর আত্মত্যাগের স্মৃতিচারণ।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *