বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইন জালিয়াতি একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেটের বিস্তার লাভের সাথে সাথে প্রতারকরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহারকারীদের অর্থ ও ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে।
এই সমস্যা সমাধানে গুগল (Google) তাদের ক্রোম ব্রাউজারে (Chrome Browser) একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করেছে, যা ব্যবহারকারীদের অনলাইন জালিয়াতি থেকে রক্ষা করবে।
গুগল তাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence) বা এআই (AI) প্রযুক্তির একটি বিশেষ সংস্করণ ব্যবহার করছে, যা ব্যবহারকারীর ডিভাইসেই সক্রিয় থাকবে। এই প্রযুক্তি ওয়েব ব্রাউজিংয়ের সময় সন্দেহজনক ওয়েবসাইটগুলো চিহ্নিত করতে পারবে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যবহারকারী এমন একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন যা প্রযুক্তিগত সহায়তার নামে ব্যবহারকারীর ডিভাইসকে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভীতি দেখায় এবং কিছু ডাউনলোড করতে বলে, তবে এই এআই সাথে সাথে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে।
এই নতুন এআই প্রযুক্তি ক্রোম ব্রাউজারের ‘এনহেন্সড প্রোটেকশন’ (Enhanced Protection) মোডে কাজ করবে। যখন কোনো ব্যবহারকারী কোনো ওয়েবসাইটে ক্লিক করবেন, তখন এই এআই তাৎক্ষণিকভাবে সেই ওয়েবপৃষ্ঠাটি বিশ্লেষণ করবে এবং কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে।
অনেক সময়, জালিয়াতকারীরা তাদের ওয়েবপেজগুলোকে এমনভাবে তৈরি করে যেগুলি সনাক্তকরণ এড়াতে পারে। এই এআই সেই ধরনের কৌশলও শনাক্ত করতে সক্ষম।
শুধু তাই নয়, গুগল তাদের সার্চ ফলাফলেও (Search Results) জালিয়াতিপূর্ণ ওয়েবসাইটগুলো শনাক্ত করতে এআই ব্যবহার করছে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা সার্চ করার সময় প্রতারণামূলক ওয়েবসাইটের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।
গুগল জানিয়েছে, এআই চালিত এই ব্যবস্থা চালু করার পর থেকে তারা প্রতিদিন কয়েকশ মিলিয়ন সন্দেহজনক ওয়েবপেজ ব্লক করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশেও অনলাইন জালিয়াতির প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে, মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন বিকাশ, নগদ) এবং অনলাইন কেনাকাটার (e-commerce) জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতারণার ঘটনাও বাড়ছে।
অনেক সময়, ভুয়া চাকরির প্রস্তাব, লটারি জেতার প্রলোভন অথবা পরিচিত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামে আসা বার্তা ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করে। গুগলের এই নতুন প্রযুক্তি বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা তাদের অনলাইন নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করবে।
গুগল ছাড়াও, অন্যান্য অনেক প্রযুক্তি কোম্পানিও এআই ব্যবহার করে অনলাইন জালিয়াতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যেমন, ব্রিটিশ মোবাইল ফোন কোম্পানি ও২ (O2) ‘ডেইজি’ নামের একটি এআই চ্যাটবট তৈরি করেছে, যা ফোন কল জালিয়াতদের সাথে কথা বলে তাদের ব্যস্ত রাখতে সাহায্য করে।
মাইক্রোসফট (Microsoft) তৈরি করেছে এমন একটি টুল, যা ফোন কথোপকথন বিশ্লেষণ করে জালিয়াতি সনাক্ত করতে পারে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা এখন সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। গুগলের এই নতুন পদক্ষেপ ব্যবহারকারীদের অনলাইন জগতে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক হবে এবং জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন