ট্রাম্পের এজেন্ডা: রিপাবলিকানদের কৌশল, মধ্যপন্থীদের বিদ্রোহ?

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টিতে আসন্ন নির্বাচনে নীতি নির্ধারণ নিয়ে চরম বিভেদ দেখা দিয়েছে। দলের মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতারা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নীতিমালার বিরোধিতা করছেন এবং তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভের স্পিকার মাইক জনসনকে তারা তাদের দাবি মানতে বাধ্য করতে চাচ্ছেন। খবরটি প্রকাশ করেছে সিএনএন।

আসন্ন ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে রিপাবলিকান পার্টির রক্ষণশীল এবং উদারপন্থী উভয় শিবিরের নেতাদের মধ্যে এই বিভেদ বাড়ছে। মধ্যপন্থীরা স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় সংকোচনের প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছেন।

তাদের মূল উদ্বেগ হলো মেডিকেইড-এর মতো সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো হলে, তা ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। মেডিকেইড হলো যুক্তরাষ্ট্রের দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচি।

কংগ্রেস যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম নীতি প্যাকেজ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন মধ্যপন্থী রিপাবলিকানরা তাদের অবস্থান আরও জোরালো করেছেন। তারা বলছেন, দলের কট্টরপন্থীদের চাপে নতি স্বীকার করার দিন শেষ হয়েছে।

নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মাইক ললার সিএনএনকে বলেন, “আমরা এমন কিছু সমর্থন করতে রাজি নই, যা আমরা সমর্থন করি না। আমাদের মতো নেতাদের কারণেই প্রতিনিধি পরিষদে এখন পর্যন্ত রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।”

রিপাবলিকানদের এই অংশের মূল লক্ষ্য হলো মেডিকেইডের সুবিধাগুলো রক্ষা করা। তাদের আশঙ্কা, এই খাতে বরাদ্দ কমালে অন্তত ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সরকারি ব্যয় কমাতে গিয়ে বিপত্তি ঘটবে।

এছাড়া, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি এবং স্থানীয় কর হ্রাসের মতো বিষয়গুলো নিয়েও তাদের ভিন্নমত রয়েছে।

নিউ জার্সির কংগ্রেসম্যান জেফ ভ্যান ড্রিউ ইতোমধ্যে মেডিকেইড নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মেডিকেইড থেকে সুবিধাভোগীদের—হাসপাতাল বা নার্সিংহোমসহ—কাউকে বঞ্চিত করা হলে, তিনি সেই বিলে ভোট দেবেন না।

রিপাবলিকানদের মধ্যে মেডিকেইড নিয়ে বিভেদ এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আগামী ৫ মে থেকে হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভের এনার্জি অ্যান্ড কমার্স কমিটি বৈঠকে বসবে এবং সেখানে স্বাস্থ্যখাতে ৮৮০ বিলিয়ন ডলার কিভাবে কাটছাঁট করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা হবে।

ইতিমধ্যে, রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছেন যে, মেডিকেইডের ওপর আঘাত হানা নীতিগত এবং রাজনৈতিকভাবে ভুল হবে। কারণ, এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৮ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন, যাদের অনেকেই ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন।

ডেমোক্র্যাটরা এরই মধ্যে বিষয়টিকে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে তুলে ধরার ইঙ্গিত দিয়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি সামাজিক নিরাপত্তা, মেডিকেয়ার ও মেডিকেইড—এই তিনটি খাতে কোনো ধরনের কাটছাঁট সমর্থন করবেন না।

তবে রিপাবলিকানরা বলছেন, মেডিকেইডের সুবিধা কমা ছাড়াই ফেডারেল স্বাস্থ্যখাতে অপচয় কমিয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব।

রিপাবলিকান নেতারা মনে করছেন, সুবিধাভোগীদের কাজ করার শর্ত দেওয়া, প্রতি ছয় মাস অন্তর তাদের যোগ্যতার প্রমাণ চাওয়া এবং অবৈধভাবে বসবাসকারীদের স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করার মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে কিছু অর্থ সাশ্রয় করা যেতে পারে।

তবে, এই পদক্ষেপগুলো তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে যথেষ্ট হবে না।

অন্যদিকে, রিপাবলিকান দলের মধ্যে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, বিভিন্ন রাজ্যে স্থানীয় করের ওপর যে ছাড় দেওয়া হয়, তা বহাল রাখা হবে কিনা।

নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, ইলিনয় ও ক্যালিফোর্নিয়ার রিপাবলিকান নেতারা এই ছাড় বহাল রাখার জন্য চেষ্টা করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রিপাবলিকানদের জন্য মেডিকেইড ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির মতো বিষয়গুলোতে সরকারি ব্যয় কমানো কঠিন হবে। কারণ, সুবিধাভোগীদের কোনো ধরনের অসুবিধা না করে এই ধরনের কর্মসূচিগুলোতে কিভাবে কাটছাঁট করা যায়, সেটাই এখন তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *