আশ্চর্য! একটি গরিলা শিশুর মা হয়ে জীবন বদলে গেল!

একটি বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছিলেন চিড়িয়াখানার এক কর্মী। যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল চিড়িয়াখানায় কাজ করা অ্যালান টোইন নামের এক ব্যক্তি, যিনি একটি অপরিণত গরিলা শাবকের দেখাশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন।

এই ঘটনাটি শুধু একটি প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার গল্প নয়, বরং মাতৃত্বের এক অন্যরকম সংজ্ঞা তৈরি করেছিল। ২০১৬ সালে, যখন আফিয়া নামের গরিলা শাবকটির জন্ম হয়, তখন তার মা, কেরার শরীরী অবস্থা ভালো ছিল না।

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়ার পর, আফিয়াকে বাঁচানোর জন্য বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন ছিল।

ছোট্ট আফিয়াকে প্রথমে যখন টোইন নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র চার সপ্তাহ। টোইনের মনে আছে, কীভাবে ছোট্ট আঙুল দিয়ে সে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে রাখত।

সেই মুহূর্তেই তাদের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়, যা ভালোবাসার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। টোইন জানান, এর আগে তিনি কখনো শিশুদের এতটা কাছ থেকে দেখেননি।

তার কাছে বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ নতুন।

সাধারণত, চিড়িয়াখানার কর্মীরা পশুদের দেখাশোনা করেন, কিন্তু আফিয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। গরিলাদের মায়ের দুধের উপর নির্ভরশীলতা প্রায় তিন বছর পর্যন্ত থাকে।

তাই, আফিয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিল, হয় তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, নয়তো অন্য কোনো গরিলার কাছে মানুষ করার। কারণ, বন্য পরিবেশে টিকে থাকতে হলে, অন্যান্য গরিলার মতোই আচরণ করতে হবে তাকে।

টোইন তখন তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন, যেখানে তার সঙ্গীর আগের পক্ষের দুটি সন্তানও ছিল। তাদের জন্যও বিষয়টি ছিল বেশ আকর্ষণীয়।

আফিয়া ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। সে টোইনের পিঠে চড়ে খেলা করত, তার হাত ধরে ঝুলে থাকার চেষ্টা করত।

টোইন তার মুখভঙ্গিমা থেকে ঘুম, কৌতূহল—সবকিছু বুঝতে পারতেন। আফিয়াও টোইনকে সবসময় নিরাপদ মনে করত।

ছয় মাস বয়সে সে ঘরের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করত, খেলনা নিয়ে খেলা করত। টোইনের সবচেয়ে প্রিয় ছিল, যখন আফিয়া হাসতে হাসতে সোফা থেকে লাফিয়ে পড়ত এবং কুস্তি লড়ত।

আফিয়াকে মানুষ করার এই সময়ে, টোইন তার পরিবারের কাছ থেকে দূরে ছিলেন। তার সঙ্গীর আগের পক্ষের সন্তানেরা বিষয়টি নিয়ে ঈর্ষান্বিত ছিল।

টোইন যখন আফিয়ার সাথে মেঝেতে গড়াগড়ি করতেন, তখন তার সঙ্গী বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, শিশুদের প্রতি তুমি কেমন বাবা হতে।’

একদিন, আফিয়াকে তার সারোগেট মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। কেরার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও, সে আফিয়ার প্রতি মাতৃত্বের কোনো অনুভূতি দেখাচ্ছিল না।

এই বিদায়ের মুহূর্তে, টোইন প্রথমবারের মতো অনুভব করেছিলেন, সন্তানদের বড় হয়ে যাওয়ার পর বাবা-মায়ের কেমন লাগে।

এই অভিজ্ঞতা টোইনকে নতুন করে শিখিয়েছিল, কীভাবে একটি পরিবারের যত্ন নিতে হয়, তাদের ভালো রাখতে হয়।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে এই ধরনের প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বন্য পরিবেশে গরিলাদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *