ভয়াবহ! বিশ্বে গরমের দাপট বাড়বে, ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ?

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামী দিনে গ্রীষ্মের তীব্রতা আরও বাড়বে, এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে একটি নতুন গবেষণায়।

গবেষণা বলছে, শতাব্দীর শেষে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বছরে প্রায় দুই মাস অতিরিক্ত “সুপারহট” দিনের সাক্ষী থাকতে হবে। তবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে, এমনটাও জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট সেন্ট্রাল এবং ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন নামক আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিজ্ঞানীদের একটি দল কম্পিউটার মডেলিং ব্যবহার করে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।

তাদের হিসাব অনুযায়ী, কার্বন নিঃসরণ কমাতে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কারণে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যদি এই চুক্তি না হতো, তাহলে অতিরিক্ত ১১৪ দিন মারাত্মক গরমের সম্মুখীন হতে হতো পৃথিবীকে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা যদি ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যেকার স্বাভাবিক তাপমাত্রার ৯০ শতাংশের বেশি হয়, তবে সেই দিনগুলোকে “সুপারহট” দিন হিসেবে ধরা হবে।

এই হিসেবে, ২০১৫ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যে গড়ে ১১ দিন অতিরিক্ত গরম অনুভূত হয়েছে।

এই গবেষণায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, কার্বন নিঃসরণে কম অবদান রাখা দেশগুলোই এর ভয়াবহতার শিকার হবে বেশি।

যেমন, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সামোয়া, পানামা এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্বীপ ও উপকূলীয় দেশগুলোতে “সুপারহট” দিনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হারে বাড়বে। পানামাতে এই সংখ্যা ১৪৯ দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারতের মতো বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোতে গরমের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম বাড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও খারাপ হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে ইউরোপে যে তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ বেড়েছে এবং তাপমাত্রা ০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শতাব্দীর শেষে এই ধরনের তাপপ্রবাহ আরও ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বাংলাদেশের জন্য এই গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, বাংলাদেশ একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং এখানে তাপপ্রবাহ একটি নিয়মিত ঘটনা।

ভবিষ্যতে গরমের তীব্রতা বাড়লে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এই পরিস্থিতিতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি, জনগণকে সচেতন করা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো তৈরি করা দরকার।

একই সাথে, উন্নত দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে হবে।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *