আতঙ্ক! সরকারি ঋণে ডুবছে ধনী দেশ, বাড়ছে খরচ, কী হবে?

উন্নত দেশগুলোর সরকারি ঋণের বোঝা ২০০৭ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, এমনটাই জানাচ্ছে একটি নতুন প্রতিবেদন। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে সরকারি ঋণের সুদ পরিশোধের খরচ জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ গ্রাস করছে, যা প্রতিরক্ষা, পুলিশি পরিষেবা এবং গৃহায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয়ের থেকেও বেশি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, উন্নত বিশ্বের ৩৮টি দেশের জাতীয় আয়ের শতকরা হিসাবে ঋণ পরিশোধের খরচ ২০২১ সালের ২.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৩.৩ শতাংশ। এর ফলে সরকারগুলোকে তাদের রাজস্বের একটি বৃহত্তর অংশ ঋণদাতাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিভিন্ন সংকট মোকাবিলায় সরকারগুলো বর্তমানে ব্যয় বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। সবুজ অর্থনীতিতে উত্তরণ, প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি, এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে গিয়ে তাদের উপর ব্যয়ের চাপ বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে, উন্নত দেশগুলো নতুন করে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। ওইসিডিভুক্ত দেশগুলো ২০২৩ সালে প্রায় ১৫.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছে। সুদ পরিশোধ এবং অন্যান্য বিষয় হিসাব করে দেখা গেছে, অতিরিক্ত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলার।

বর্তমানে ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর মোট সরকারি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে সার্বভৌম ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। ওইসিডি বহির্ভূত দেশগুলোতেও ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায়, এই মুহূর্তে বিশ্বের মোট সার্বভৌম ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫.২ ট্রিলিয়ন ডলারে।

এছাড়া, কর্পোরেট ঋণও বাড়ছে, যা বর্তমানে ৩৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। সবমিলিয়ে, বর্তমানে বিশ্বের মোট ঋণের পরিমাণ ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

এর মধ্যে, কোম্পানিগুলো শেয়ার বাইব্যাক এবং লভ্যাংশ প্রদানের জন্য অতিরিক্ত ঋণ নিচ্ছে।

ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে কয়েকটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স, ইতালি এবং যুক্তরাজ্য – এই পাঁচটি দেশ একাই ওইসিডি দেশগুলোর মোট ঋণের ৮৫ শতাংশের বেশি নিয়েছে।

এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই এই ঋণের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি নিয়েছে।

ওইসিডির মহাসচিব ম্যাথিয়াস করমান জানিয়েছেন, একদিকে যেমন ঋণের খরচ বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে ঋণের ঝুঁকি।

এই পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ তৈরি করা এবং প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণ করা।

তিনি আরও বলেন, উচ্চ সুদহারের কারণে সরকারগুলোকে এখন উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের দিকে নজর দিতে হবে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করবে।

প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, ২০২৫ সাল নাগাদ ওইসিডি দেশগুলোর গড় ঋণ-জিডিপি অনুপাত বেড়ে ৮৫ শতাংশে পৌঁছতে পারে।

এটি ২০১৯ সালের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি এবং ২০০৭ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

এছাড়া, করোনা মহামারীর সময় নেওয়া ঋণের একটি বড় অংশ আগামী দুই বছরের মধ্যে উচ্চ সুদের হারে পরিশোধ করতে হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নিম্ন আয়ের এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো।

এই দেশগুলোর অর্ধেকের বেশি ঋণ আগামী তিন বছরের মধ্যে এবং ২০ শতাংশের বেশি ঋণ চলতি বছরে পরিশোধ করতে হবে।

ওইসিডি-র ক্যাপিটাল মার্কেটস এবং ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের প্রধান সারদার সেলিকের মতে, সরকার এবং কোম্পানিগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের ঋণ দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতাকে সহায়তা করে।

তিনি বলেন, “যদি তারা এই পথে (উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ) চলে, তাহলে আমরা উদ্বিগ্ন নই। কিন্তু যদি তারা তা না করে, তাহলে অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা না বাড়িয়ে অতিরিক্ত ঋণ নেয়, তবে আমাদের আরও কঠিন সময় দেখতে হতে পারে।”

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসায় বৈদেশিক সাহায্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়তে পারে।

তাই, বাংলাদেশের উচিত টেকসই ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *