কে হার মানবে? অচলাবস্থা ভাঙতে কি নতি স্বীকার?

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে অচলাবস্থা? কিভাবে এর অবসান হয়, আসুন জেনে নিই।

যুক্তরাষ্ট্রে আবারও একটি সরকারি অচলাবস্থার (shutdown) আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর কারণ হলো, আইনপ্রণেতারা সময়মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিল (spending bills) পাস করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর ফলে দেশটির সরকারের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে, এই অচলাবস্থা আসলে কি? এর প্রভাবই বা কী?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, সরকারের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের বিলগুলো যদি সময় মতো পাস না হয়, তাহলে অনেক সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে, এর মানে এই নয় যে, সরকারের সবকিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম, যেমন-মেডিকেয়ার, সচল থাকবে।

এছাড়াও, সীমান্ত সুরক্ষা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস সহ অনেক জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে। সামরিক বাহিনী এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক বিভাগেও স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় থাকবে।

কিন্তু, এর ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে হতে পারে কোনো বেতন ছাড়াই। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের কার্যকারিতা কমে যায়, যা শেষ পর্যন্ত দেশটির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন অচলাবস্থার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

* **ক্লিন্টন-গিংরিচ অচলাবস্থা (১৯৯৫-৯৬):** এই সময়ে, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের মধ্যে বাজেট নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এর ফলস্বরূপ, দু’বার সরকারি কার্যক্রম কিছুদিনের জন্য বন্ধ ছিল। প্রথমে ৬ দিন এবং পরে ২২ দিন।

শেষ পর্যন্ত, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এই অচলাবস্থার অবসান হয়।

* **ওবামা কেয়ার অচলাবস্থা (২০১৩):** তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্বাস্থ্যনীতি (ওবামা কেয়ার) নিয়ে রিপাবলিকানদের বিরোধিতার কারণে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। রিপাবলিকানরা ওবামাকেয়ারের তহবিল বন্ধ করতে চেয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত, তারা তাদের দাবি থেকে সরে আসে এবং সরকারের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়।

* **ট্রাম্পের অচলাবস্থা (২০১৮-১৯):** ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দের দাবিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই অচলাবস্থা ৩৫ দিন স্থায়ী ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম।

শেষ পর্যন্ত, ডেমোক্র্যাটদের আপত্তির মুখে ট্রাম্পকে তার অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়।

এই অচলাবস্থাগুলো মূলত রাজনৈতিক বিতর্কের ফল। ডেমোক্র্যাটরা চাইছে, স্বাস্থ্য বীমার ভর্তুকিগুলো পুনর্বহাল করা হোক। অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা এই বিষয়ে পরে আলোচনা করতে রাজি। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ নমনীয় হয় এবং অচলাবস্থা কাটে।

সরকারের অচলাবস্থা সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। কারণ, এর ফলে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময়, যে দল অচলাবস্থা তৈরি করতে চায়, তাদেরকেই এর জন্য দায়ী করা হয়।

এই মুহূর্তে, ডেমোক্র্যাটরা তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে এটিকে দেখছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অচলাবস্থার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সাহায্য এবং বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাই, সবারই এখন দৃষ্টি সেদিকে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *