যুক্তরাষ্ট্রের সরকার অচল হয়ে যাওয়ায় দেশটির হাজার হাজার কর্মী চরম বিপাকে পড়েছেন। এই অচলাবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সরকারি ঠিকাদারির ভিত্তিতে কাজ করা কর্মীরা।
এই কর্মীদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী, এবং ক্যাফেটেরিয়া কর্মী সহ বিভিন্ন স্তরের শ্রমিক রয়েছেন। সরকারি কর্মীরা যেখানে এই পরিস্থিতিতে বেতন পান, সেখানে ঠিকাদার ভিত্তিক কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়, যা তাদের পরিবারকে চরম আর্থিক কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয়।
ওয়াশিংটন ডিসিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে এমন সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারি কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যেমন জাদুঘরগুলোও তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এর ফলে, চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা কাজ হারাচ্ছেন এবং তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অড্রে মারে নামের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, যিনি প্রায় তিন দশক ধরে একটি জাদুঘরে কাজ করছেন, এখন তার পরিবারের ভরণপোষণের চিন্তায় দিশেহারা।
তিনি জানান, কিভাবে সন্তানদের খাবার জোগাবেন এবং বাড়ির ঋণ পরিশোধ করবেন সেই দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মীদের বেতন বকেয়া হিসেবে পরিশোধ করা হলেও, ঠিকাদার ভিত্তিক কর্মীদের ক্ষেত্রে এমন কোনো নিয়ম নেই। ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট ল’ প্রজেক্ট (NELP) এর মতে, এই ধরনের কর্মীদের বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এই পরিস্থিতিতে, স্বল্প আয়ের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন, কারণ তাদের সঞ্চয় কম থাকে এবং তারা সাধারণত দিন আনে দিন খায়।
মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা, এবং তিন সন্তানের জননী, টিয়ারা রবার্টস-এর মতো কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন। তিনি একটি জাদুঘরে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
টিয়ারা বলেন, এই অচলাবস্থা তার জীবনে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি হয়তো উবার বা ইন্সটাকার্টের মতো ডেলিভারি সার্ভিসে কাজ করার চেষ্টা করছেন।
আইনজীবী নিকোল আটালাহ্ জানিয়েছেন, সাধারণত এই পরিস্থিতিতে ঠিকাদার ভিত্তিক কর্মীদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। যদিও কিছু ক্ষেত্রে, দক্ষ কর্মীর ক্ষতি হলে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
তবে, দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা কর্মীদের জন্য এমনটা খুবই বিরল।
পরিস্থিতি বিবেচনায়, ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের দ্রুত বেকার ভাতার জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, সরকারি কাজকর্ম বন্ধ থাকার কারণে বিভিন্ন এলাকার বেকারত্ব বীমা ব্যবস্থা এরই মধ্যে চাপে পড়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, সিনেটর টিনা স্মিথ এবং কংগ্রেসওম্যান আয়া আনা প্রেসলি একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যেখানে সরকারি অচলাবস্থার সময় ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের বেতন প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বিলের মাধ্যমে, ঠিকাদার ভিত্তিক কর্মীদের প্রতি সপ্তাহে ১৪৪২ ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন (SEIU)-এর মতে, ২০১৮-২০১৯ সালের দীর্ঘতম অচলাবস্থার সময় প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক ঠিকাদার কর্মী কোনো বেতন পাননি। এই পরিস্থিতি শ্রমিক শ্রেণির পরিবারগুলোর জন্য অত্যন্ত কষ্টের কারণ হয়েছে।
আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত কর্মী, মারিয়া মাদোনাডোর কথায় উঠে আসে অভিবাসন সংক্রান্ত জটিলতা। তিনি জানান, সরকার থেকে কোনো সহায়তা নিলে তার গ্রিন কার্ড পেতে সমস্যা হতে পারে। তাই তিনি কোনো সাহায্য নিতেও দ্বিধা বোধ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অচলাবস্থা সেখানকার শ্রমিকদের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের কর্মীরা, যারা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তারা কঠিন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।
তাদের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তথ্যসূত্র: সিএনএন