শিরোনাম: কিভাবে সরকার ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি ‘শিক্ষিত অনুমান’ করে
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (CBO) কর্তৃক প্রস্তাবিত একটি কর বিলের কারণে দেশটির জাতীয় ঋণে ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই পূর্বাভাস নিয়ে বর্তমানে বিতর্ক চলছে। এই নিয়ে কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং রক্ষণশীল অর্থনীতিবিদ সিবিও’র এই হিসাবকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
তাদের মতে, এই হিসাবটি “নাটকীয়ভাবে অতিরঞ্জিত”।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন সিএনএন-এর একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিবিও’র এই হিসেবের সমালোচনা করেন। তিনি আশা করেন, বাজেট-সচেতন সিনেটররা এই বিলটি নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না। কারণ এতে নতুন হিসাব সামনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, প্রভাবশালী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’-এর সঙ্গে যুক্ত এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগী স্টিফেন মুর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে সিবিও-কে এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি বাজেট নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সিবিও এবং জয়েন্ট কমিটি অন ট্যাক্সেশন (JCT) – এই দুটি সংস্থার বাজেট স্কোরিং প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণত বড় কোনো বিল জাতীয় ঋণে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করলে এমন সমালোচনা শোনা যায়। প্রাক্তন হাউজ স্পিকার নিউট গিংরিচ দীর্ঘদিন ধরে সিবিও’র সমালোচনা করে আসছেন। তিনি ২০১৯ সালে এক নিবন্ধে সিবিও বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন।
তার মতে, এই সংস্থাটি কর হ্রাসের ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি সঠিকভাবে বিবেচনা করে না।
তবে, সিবিও-কে একটি নিরপেক্ষ সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সংস্থাটির প্রধান কে হবেন, সেই বিষয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলেরই মতামত থাকে। এছাড়া, সিবিও তাদের হিসাবের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে বিবেচনায় নেয়, যা ‘ডায়নামিক স্কোরিং’ নামে পরিচিত।
উভয় দলের অনেক আইনপ্রণেতা সিবিও’র স্কোর গ্রহণ করতে রাজি। উদাহরণস্বরূপ, উইসকনসিনের রিপাবলিকান সিনেটর রন জনসন হাউস বিলের বিরোধিতা করেছেন, কারণ এটি বাজেট ঘাটতি বাড়াবে। তিনি বলেন, “স্বাধীন বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ৩.৩ ট্রিলিয়ন থেকে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। আমি তাদের সঙ্গে একমত। আমাদের ঘাটতি কমাতে হবে এবং ব্যয়ের দিকে নজর দিতে হবে।”
সিবিও’র হিসাব নিয়ে আপত্তি জানানো রাজনৈতিক বিতর্কের একটি অংশ হতে পারে। তবে, কীভাবে সিবিও একটি ট্রিলিয়ন ডলারের কর হ্রাসের বাজেট ঘাটতির ওপর প্রভাব মূল্যায়ন করে, তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, সিবিও’র সাবেক পরিচালক ডগলাস হল্টজ-আইকিন বলেন, সিবিও-এর প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়নের ফলে ট্রেজারিতে অর্থের আগমন ও বহির্গমনের হিসাব করা। জয়েন্ট কমিটি অন ট্যাক্সেশন এই ট্যাক্স বিষয়ক কাজটি করে। উভয় সংস্থাই একই পদ্ধতিতে কাজ করে।
তিনি আরও জানান, সিবিও প্রথমে একটি অর্থনৈতিক পূর্বাভাস তৈরি করে এবং তারপর বিদ্যমান কর ও ব্যয়ের নিয়ম যুক্ত করে একটি বেসলাইন তৈরি করে। এরপর বিভিন্ন বিল কীভাবে এই বেসলাইনের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, তা মূল্যায়ন করে।
হল্টজ-আইকিন উল্লেখ করেন, সিবিও’র অনুমান সব সময় নির্ভুল নাও হতে পারে। কারণ, তারা ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দিতে পারে না এবং অর্থনীতির পরিবর্তনশীলতা তাদের হিসাবকে প্রভাবিত করে। তবে, তারা কংগ্রেসকে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করে।
সিবিও কীভাবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন ও কাঠামোর দিক থেকে এটি একটি নিরপেক্ষ সংস্থা। সিবিও-এর মডেলগুলি নিয়মিতভাবে আপডেট করা হয় এবং অর্থনৈতিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করা হয়।
ডায়নামিক স্কোরিং সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি একটি সনাতন স্কোরিং পদ্ধতির চেয়ে ভিন্ন। এখানে অর্থনীতির আকারের পরিবর্তনকে বিবেচনায় নেওয়া হয়।
সিবিও-এর পূর্বাভাস কতটা নির্ভরযোগ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত দুটি কারণে সিবিও-এর হিসাব ভুল হয়। প্রথমত, তারা ভবিষ্যৎ অনুমান করতে পারে না এবং অর্থনীতি সবসময় অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তিত হয়। দ্বিতীয়ত, সরকার ও কংগ্রেসের বিভিন্ন পদক্ষেপ বাজেটকে প্রভাবিত করে, যা তাদের হিসাবকে প্রভাবিত করতে পারে।
১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে বাজেট নিয়ে হওয়া বিতর্কের প্রেক্ষাপটে কীভাবে সিবিও’র জন্ম হয়েছিল, জানতে চাইলে হল্টজ-আইকিন জানান, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও কংগ্রেসের মধ্যে তহবিল নিয়ে মতবিরোধের কারণে সিবিও’র ধারণা আসে। কংগ্রেস মনে করেছিল, তারা নির্বাহী বিভাগ, অর্থাৎ হোয়াইট হাউস থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারে না। তাই, তারা নিজস্ব বাজেট বিষয়ক তথ্যের জন্য একটি সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
এর ফলস্বরূপ, ১৯৭৪ সালের বাজেট অ্যাক্টের মাধ্যমে কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও) গঠিত হয়।
সিবিও’র কাজ দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। প্রথমত, তারা কংগ্রেস সদস্যদের অনুরোধে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করে এবং দ্বিতীয়ত, সেই গবেষণার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে বাজেট স্কোরিং করে।
যদি সিবিও’র পূর্বাভাস নির্ভুল না হয়, তাহলে একটি বিলের মাধ্যমে কিভাবে ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার বাজেট ঘাটতি বাড়বে, এই ধরনের রিপোর্ট থেকে আমরা কী ধারণা পেতে পারি? এমন প্রশ্নের জবাবে হল্টজ-আইকিন বলেন, এই ধরনের হিসাব দুটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি একটি সতর্কবার্তা দেয় এবং দ্বিতীয়ত, এটি নীতি-নির্ধারকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন