আতঙ্কে সরকারি কর্মীর মৃত্যু: পরিবারে শোকের ছায়া

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মচারী, মনিক লকেট: কর্মক্ষেত্রে উদ্বেগের পরিণতি।

যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের (Social Security Administration) দীর্ঘদিনের কর্মচারী মনিক লকেটের মৃত্যু হয়েছে, যা দেশটির সরকারি কর্মীদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ আর মানসিক চাপের একটি উদাহরণ। তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগের কথা বলা হলেও, উদ্বেগের বিষয় হলো, এই মৃত্যুর পেছনে কর্মক্ষেত্রের চাপ একটি বড় ভূমিকা রেখেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখে ৫৩ বছর বয়সী মনিক কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বোন কশা সিএনএনকে জানান, সরকারি বিভিন্ন বিভাগে কর্মী ছাঁটাই এবং কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে মনিক দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে ছিলেন। তিনি তাঁর সহকর্মীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন।

কশা বলেন, “আমার বোন অন্যান্য সংস্থায় হওয়া পরিবর্তনগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি আশঙ্কা করতেন, এর ফলস্বরূপ সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের কর্মীদের কী হবে। তিনি তাঁর সহকর্মীদের ভালো থাকা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, কারণ অনেক মানুষের জন্য পরিস্থিতিটা বেশ চাপপূর্ণ ছিল।”

ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে সরকারি বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও চাকরি কমানোর ফলে কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। ফেডারেল কর্মীরা, তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সিএনএনকে জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে অনেকে নিজেদের ক্ষতি করার কথাও ভাবছেন। “ডগ” (DOGE) নামে পরিচিত একটি সরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে হওয়া এই পরিবর্তনগুলোর ফলে অনলাইনে কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হয়েছে, যা তাঁদের দুর্বল এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিত্রিত করেছে।

মনিকের বোন কশা আরও জানান, “তাঁর কাছে এটা খুবই কষ্টের ছিল যে, তাঁরা যা করছিলেন, তার কোনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তিনি মনে করতেন, তাঁদের কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং তা হয়তো অপচয় হচ্ছে।”

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মৃত্যুর আগে মনিক কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। তাঁর বোন কশা মনে করেন, এই চাপই হয়তো তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়েছে।

মনিকের মৃত্যুর পর, সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের মুখপাত্র সিএনএনকে জানান, ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখে সংস্থার সদর দফতরে একজন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

আদালতের নথি অনুযায়ী, ডগ-এর কর্মীর সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে হওয়া অনিয়ম খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছে। এর ফলে কর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে, মনিকের এক সহকর্মী জানান, “মনিক আমাদের টিমের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন এবং তিনি সবসময় নিশ্চিত করতেন যে মানুষের তথ্য সুরক্ষিত আছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগের কর্মচারী এবং একজন ইউনিয়ন নেতা, অ্যালেক্স বারম্যান জানান, তিনি তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগের মাত্রা বাড়তে দেখেছেন। তিনি বলেন, “আমি দেখেছি, অনেক মানুষ মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।”

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে চরম ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। একজন বিশেষজ্ঞ জানান, “আমি দেখছি, সরকারি কর্মীরা এখন হতাশায় ভুগছেন।”

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর একজন কর্মচারী জানান, কর্মপরিবেশ তাঁদের মনোবল নষ্ট করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে ১৮০ জনের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়, পরে তাঁদের দু’সপ্তাহের মধ্যে পুনর্বহাল করা হলেও, পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।”

মনিকের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে তাঁর বোন কশা বলেন, সরকারি কর্মচারীরা মানুষের প্রতি যত্নশীল হন। তিনি আরও বলেন, “যাঁরা ২০-২৫ বছর ধরে সরকারের হয়ে কাজ করছেন, তাঁরা নিশ্চিত করতে চান যে, আমেরিকান নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে।”

যদি কোনো পাঠক মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে জরুরি সহায়তা পাওয়ার জন্য ৯৮৮ নম্বরে ফোন করে অথবা টেক্সট করে সাহায্য চাইতে পারেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *