বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, গ্র্যান্ড ন্যাশনাল নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রতি বছর ইংল্যান্ডের অ্যাintট্রি-তে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় বড় বড় আইরিশ স্টাবলগুলির (ঘোড়াশালা) দৌরাত্ম্য বাড়ছে, এমনটাই অভিযোগ তুলছেন অনেক ব্রিটিশ প্রশিক্ষক।
তাদের মতে, এর ফলে ছোট ব্রিটিশ ঘোড়শালের মালিক ও প্রশিক্ষকদের সুযোগ কমে যাচ্ছে, যা এই প্রতিযোগিতার ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ণ করছে।
গ্র্যান্ড ন্যাশনাল একটি বিখ্যাত স্টিপলচেজ (Steeplechase) প্রতিযোগিতা। এখানে ঘোড়সওয়ারদের কঠিন সব বাধা যেমন—দেয়াল, খাঁড়ি ইত্যাদি পেরিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়।
এই দৌড় প্রতিযোগিতা শুধু ব্রিটেনের নয়, সারা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কিন্তু বর্তমানে প্রতিযোগিতায় আইরিশ প্রশিক্ষকদের জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, গত বছর ৩২ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ৭ জন ব্রিটিশ ঘোড়শালের অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন। প্রথম ৭ জনের মধ্যে ৬ জনই ছিলেন উইলিয়ামস, এলিয়ট অথবা হেনরি ডি ব্রুমহেড-এর মতো আইরিশ প্রশিক্ষকদের অধীনে।
ব্রিটিশ প্রশিক্ষক এবং ঘোড়দৌড় প্রেমীদের অনেকেরই অভিযোগ, গ্র্যান্ড ন্যাশনাল তার আসল চরিত্র হারাচ্ছে। দৌড়ের পথ কিছুটা কমানো হয়েছে, বাধাগুলোও আগের চেয়ে সহজ করা হয়েছে।
এমনকি গত বছর থেকে দৌড়ে অংশ নেওয়া ঘোড়ার সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ছোট ছোট ঘোড়শালের মালিকদের জন্য ভালো ঘোড়া তৈরি করা এবং প্রতিযোগিতায় জেতার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে।
এই বিষয়ে কিম বেইলি এবং ড. রিচার্ড নিউল্যান্ড-এর মতো অভিজ্ঞ ব্রিটিশ প্রশিক্ষকরা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তাদের মতে, উইলিয়ামস ও গর্ডন এলিয়টের মতো প্রভাবশালী আইরিশ প্রশিক্ষকদের দৌরাত্ম্যের কারণে এই প্রতিযোগিতা ক্রমশ একতরফা হয়ে যাচ্ছে।
সারা ব্র্যাডস্টক নামে আরেকজন প্রশিক্ষক তার ছোট ঘোড়শালা থেকে আসা ‘মি. ভ্যাঙ্গো’ নামক ঘোড়াটির গ্র্যান্ড ন্যাশনালে অংশগ্রহণের সুযোগ না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
তবে, অনেকের মতে, গ্র্যান্ড ন্যাশনাল প্রতিযোগিতায় আইরিশ প্রশিক্ষকদের এই প্রাধান্য আসলে জাম্প রেসিংয়ের (Jump Racing) সামগ্রিক চিত্রেরই প্রতিফলন। উদাহরণস্বরূপ, এই মাসের শুরুতে চেলটেনহ্যামে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিযোগিতায় ২৮টি জয়ের মধ্যে ২০টি ছিল আইরিশ প্রশিক্ষকদের।
উইলিয়ামস সেখানে ১০টি জয় পান।
এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ গ্র্যান্ড ন্যাশনালে অংশ নেওয়া ঘোড়ার সংখ্যা সীমিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের যুক্তি হলো, এতে বিভিন্ন ঘোড়শালের মালিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়বে এবং খেলাটি আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে।
ড. নিউল্যান্ড তো এমনকি ব্রিটিশ রেসে আইরিশ ঘোড়ার অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারিরও প্রস্তাব করেছিলেন।
অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, এমন নিয়ম তৈরি করা হলে তা সাফল্যের পথে বাধা সৃষ্টি করবে। এটি খেলোয়াড়দের তাদের অর্থ কিভাবে ব্যয় করতে হবে সে সম্পর্কে বলার মতো হবে।
অনেকে এটাও মনে করেন, পরিস্থিতি এতোটাও খারাপ নয়। উদাহরণস্বরূপ, এই বছর যে ৩৪টি ঘোড়া দৌড়ে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে, তাদের মধ্যে ১৮টির প্রশিক্ষক ব্রিটিশ।
গ্র্যান্ড ন্যাশনাল কর্তৃপক্ষের মতে, প্রতিযোগীদের সুরক্ষা এবং খেলার মান উন্নয়নের জন্য গত ১০ বছরে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
তাদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে ঘোড়া এবং আরোহীদের ঝুঁকি কমেছে।
সব মিলিয়ে, গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এখনো তার আকর্ষণ ধরে রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও এটি ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে, এমনটাই আশা করা যায়।
তথ্য সূত্র: The Guardian