ডেনমার্কের গ্রিনল্যান্ড উপনিবেশের অতীত : একটি নতুন তথ্যচিত্র ঘিরে বিতর্ক
সম্প্রতি ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে একটি নতুন তথ্যচিত্র।
‘গ্রিনল্যান্ড’স হোয়াইট গোল্ড’ (Greenland’s White Gold) নামের এই চলচ্চিত্রটি ডেনমার্কের ঔপনিবেশিক শাসনের একটি দিক উন্মোচন করেছে, যা দেশটির প্রাক্তন উপনিবেশ গ্রিনল্যান্ডের সঙ্গে তাদের জটিল সম্পর্ককে নতুন করে সামনে এনেছে।
চলচ্চিত্রটি ডেনমার্কের একটি খনিজ উত্তোলন কেন্দ্র থেকে অর্থ উপার্জনের বিষয় তুলে ধরেছে, যা কয়েক দশক ধরে চলে আসা একটি প্রক্রিয়া ছিল।
এই তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর গ্রিনল্যান্ডে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সেখানকার মানুষের মধ্যে একদিকে যেমন ক্ষোভ ও দুঃখের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনই তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি অভিযোগের স্বীকৃতিও মিলেছে।
তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ড থেকে কীভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছে। গ্রিনল্যান্ডের অনেক মানুষ মনে করেন, তাদের দেশের সম্পদকে ডেনমার্ক দীর্ঘদিন ধরে শোষণ করেছে।
এই তথ্যচিত্রটি সেই ধারণা আরও জোরালো করেছে।
অন্যদিকে, ডেনমার্কে এই তথ্যচিত্রটি নিয়ে প্রথমে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, পরে তা সমালোচনার রূপ নেয়। চলচ্চিত্রটিতে প্রদর্শিত কিছু আর্থিক হিসাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বিশেষ করে, খনিজ উত্তোলন থেকে ডেনমার্কের আনুমানিক আয়ের পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
ডেনমার্কের অর্থনীতিবিদদের একাংশ এই হিসাবের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
তথ্যচিত্রটির বিষয়বস্তু এবং এর উপস্থাপনা নিয়ে ডেনমার্কের সংস্কৃতি মন্ত্রীসহ অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
পরবর্তীতে, ডেনমার্কের একটি প্রধান সম্প্রচার মাধ্যম তাদের ওয়েবসাইটে তথ্যচিত্রটি সরিয়ে নেয় এবং এর প্রধান সম্পাদক পদত্যাগ করেন।
এর কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছেন, তথ্যচিত্রের কিছু তথ্যে ত্রুটি ছিল।
তবে, এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, তথ্যচিত্রটি সরিয়ে নেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল।
সমালোচকদের মতে, তথ্যচিত্রটি ডেনমার্কের ভাবমূর্তিকে রক্ষা করার জন্য এমনটা করা হয়েছে।
এই বিতর্কের মধ্যে গ্রিনল্যান্ডের রাজনীতিবিদরা একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, তথ্যচিত্রের আর্থিক হিসাবের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, অতীতে ডেনমার্ক কীভাবে গ্রিনল্যান্ডকে শাসন করেছে, সেই বিষয়ে একটি সামগ্রিক পর্যালোচনা করা।
তাদের মতে, ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডের জন্য কিছু ভালো কাজ করলেও, অতীতের অনেক অন্যায় ও অবিচারকে অস্বীকার করা যায় না।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য কিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষও একসময় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শিকার হয়েছে।
সেই সময় আমাদের দেশের সম্পদ কিভাবে শোষিত হয়েছে, তা আমাদের ইতিহাসেও স্পষ্ট।
গ্রিনল্যান্ডের এই ঘটনা আমাদের সেই অতীত ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই, এই ধরনের তথ্যচিত্র এবং বিতর্কের মাধ্যমে আমরা অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারি এবং ভবিষ্যতে একটি উন্নত সমাজ গঠনের জন্য কাজ করতে পারি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান