গ্রিনল্যান্ড: ডোনাল্ড ট্রাম্পের নজর, বিনিয়োগকারীদের গোপন ফায়দা?

গ্রিনল্যান্ডে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহের পেছনে তার প্রধান কিছু অনুসারীর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের তথ্য সামনে এসেছে। এই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছেন প্রযুক্তি খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

তাদের এই বিনিয়োগের ফলে গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে তারা বিশাল মুনাফা অর্জনের সুযোগ পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার দীর্ঘদিন ধরেই গ্রিনল্যান্ডের বিরল খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে প্রযুক্তি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছে। এছাড়াও, সেখানে তেল ও গ্যাসের মজুদ অনুসন্ধানেরও সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় এইসব প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি অনুদান দিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন মেটা’র (Meta) মার্ক জাকারবার্গ, ওপেনএআই-এর (OpenAI) স্যাম অল্টম্যান, অ্যামাজনের (Amazon) জেফ বেজোস, এবং অন্যান্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।

এদের অনেকেই গ্রিনল্যান্ডের খনিজ সম্পদ উত্তোলনকারী বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন।

অন্যদিকে, গ্রিনল্যান্ডে খনিজ প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগকারী কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ট্রাম্প মিডিয়ায় (Trump Media) প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন, যা নির্বাচনের কয়েক দিন আগের ঘটনা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিনিয়োগ ছিল মূলত ট্রাম্পের প্রতি তাদের সমর্থন জানানো।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের আর্থিক লেনদেন “স্বার্থের সংঘাত” তৈরি করতে পারে, যেখানে সরকারি নীতি প্রণয়নে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বিশেষভাবে দেখা হয়।

গ্রিনল্যান্ডকে কেন্দ্র করে এই ধরনের ঘটনা সেই ধারণাকেই আরও জোরালো করে।

গ্রিনল্যান্ডের বিরল খনিজগুলোর মধ্যে রয়েছে কোবাল্ট, নিকেল এবং প্লাটিনাম, যা ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য।

বর্তমানে, বিশ্বের বিরল খনিজ বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ চীনের দখলে রয়েছে। তাই, এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রযুক্তি শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।

তবে, গ্রিনল্যান্ডের ভৌগোলিক পরিবেশ এবং সেখানকার স্থানীয় জনগণের বিরোধিতার কারণে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া, অতীতে এখানে তেল অনুসন্ধানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

তাই, খনিজ সম্পদ উত্তোলনের এই দৌড় কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *