আমেরিকার একটি বিতর্কিত পাইপলাইন প্রকল্পের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন গ্রিনপিসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে জ্বালানি সংস্থা এনার্জি ট্রান্সফার। এই মামলার শুনানি বর্তমানে উত্তর ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের একটি আদালতে চলছে এবং এতে গ্রিনপিসের স্বাধীনতা ও প্রতিবাদের অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে, ড্যাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইন নির্মাণের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠী ও পরিবেশবাদীরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এই পাইপলাইনটি মিসৌরি নদীর উপর দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, যা স্থানীয় স্টান্ডিং রক সিউক্স উপজাতির জলের উৎসের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারতো। আদিবাসী সম্প্রদায়ের আশঙ্কা ছিল, এই পাইপলাইনের কারণে তাদের পবিত্র স্থানগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং জলের উৎস দূষিত হবে।
এই প্রতিবাদে গ্রিনপিসের যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছে এনার্জি ট্রান্সফার। মামলার শুনানিতে এনার্জি ট্রান্সফারের আইনজীবী জানান, গ্রিনপিস পাইপলাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে অর্থ ও জনবল সরবরাহ করেছে।
তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য বহিরাগতদের অর্থ দেওয়ার, বিক্ষোভকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। আইনজীবীর দাবি, গ্রিনপিস এমন একটি বিবৃতি তৈরি করে যা কোম্পানিটির ব্যাংকগুলোকে ভীত করে তোলে।
বিবৃতিতে পাইপলাইন নির্মাণকালে সমাধিক্ষেত্র ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়, যার ফলে অনেক ব্যাংক তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়।
অন্যদিকে, গ্রিনপিসের আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের বক্তব্য, বিক্ষোভের সঙ্গে তাদের সামান্যই সম্পর্ক ছিল এবং তারা প্রতিবাদে জড়িত ছিল এমন কোনো প্রমাণ নেই।
তাদের মতে, এনার্জি ট্রান্সফারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। গ্রিনপিসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, এই মামলা মূলত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করার একটি কৌশল। এটি তাদের প্রতিবাদ ও মত প্রকাশের অধিকারের উপর আঘাত হানছে।
আদালতে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পরে, বিচারকরা তাদের রায় দেবেন। এই রায়ের উপর নির্ভর করছে গ্রিনপিসের ভবিষ্যৎ এবং পরিবেশ বিষয়ক আন্দোলনের স্বাধীনতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলার রায় শুধু আমেরিকাতেই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে পরিবেশ আন্দোলন ও কর্পোরেট জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস