**গ্রিনপিসের বিরুদ্ধে ড্যাকোটা পাইপলাইন মামলায় বিশাল ক্ষতিপূরণ, অধিকারকর্মীদের তীব্র নিন্দা**
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন গ্রিনপিসের বিরুদ্ধে ২০১৬-২০১৭ সালে ড্যাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইন (DAPL) প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জেরে ক্ষতিপূরণের রায় দেওয়া হয়েছে। নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের একটি জুরি বোর্ড গ্রিনপিসকে পাইপলাইন কোম্পানি এনার্জি ট্রান্সফারকে (Energy Transfer) অন্তত ৬৬০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা) পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে।
একইসঙ্গে গ্রিনপিসের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগও আনা হয়েছে।
এই রায়ের তীব্র সমালোচনা করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে ‘আইন ব্যবস্থার অপব্যবহার’ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ‘আক্রমণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল’র (CIEL) প্রেসিডেন্ট রেবেকা ব্রাউন এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই রায় আদিবাসী এবং স্থানীয় জনগণের ভূমি ও পানির অধিকার রক্ষার বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত আঘাত।
ব্রাউন আরও বলেন, “এটি প্রতিবাদ দমনের উদ্দেশ্যে কর্পোরেটদের আইন ব্যবস্থার অপব্যবহারের একটি স্পষ্ট উদাহরণ।”
গ্রিনপিসের সহযোগী একটি অলাভজনক সংস্থা, ক্লায়েন্ট আর্থ (ClientEarth) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই রায় প্রমাণ করে যে পরিবেশ দূষণকারী বৃহৎ সংস্থাগুলো তাদের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে প্রায়ই আইনের আশ্রয় নেয়।
তারা চাইছে, দূষণকারী শিল্পগুলোর বিরুদ্ধে কথা বললে কোনো সংস্থাই নিরাপদ থাকবে না।
অন্যদিকে, স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠী স্ট্যান্ডিং রক সিউক্স ট্রাইবের প্রধান জ্যানেট আলকিয়ের এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই মামলাটি আমাদের উপজাতিকে স্ট্যান্ডিং রকের ঘটনা এবং ড্যাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইনের কারণে আমাদের ভূমি, জল ও মানুষের জন্য সৃষ্ট হুমকি সম্পর্কে সত্য কথা বলতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা।”
তিনি আরও যোগ করেন, “স্ট্যান্ডিং রক সিউক্স উপজাতিকে চুপ করানো যাবে না।”
তবে এনার্জি ট্রান্সফারের আইনজীবী ট্রে কক্স এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গ্রিনপিসের কার্যক্রম যে বেআইনি ছিল, রায় তা প্রমাণ করেছে।
একইসঙ্গে তিনি এটিকে সংবিধান ও নর্থ ডাকোটা রাজ্যের জন্য একটি “উদযাপনের দিন” হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। নর্থ ডাকোটার রিপাবলিকান সিনেটর কেভিন ক্রেমারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই রায়ের সমালোচনা করে বলেছে, এটি ভিন্নমতকে স্তব্ধ করার এবং তৃণমূল আন্দোলনের শক্তিকে ধ্বংস করার একটি অপচেষ্টা।
তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প ক্রমশ ‘ল’ফেয়ার’ (lawfare) – অর্থাৎ, ভীতি প্রদর্শনের অস্ত্র হিসেবে আদালত ও আইনি পদক্ষেপের আশ্রয় নিচ্ছে।
এই মামলার প্রেক্ষাপটে, অনেক বিশেষজ্ঞ একে ‘স্ল্যাপ স্যুট’ (SLAPP suit) -এর একটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। স্ল্যাপ স্যুট হলো এমন এক ধরণের দেওয়ানি মামলা, যা কর্পোরেশন, রাজনীতিবিদ বা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রায়ই ব্যবহার করেন সমালোচক, সাংবাদিক, এবং কর্মী-গোষ্ঠীকে হয়রানি ও চুপ করানোর জন্য।
এসব মামলার কারণে অভিযুক্তদের বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, যা মামলা জেতার মতোই বাদী পক্ষের জন্য লাভজনক হয়।
আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ‘থার্টিফাইভও ডটওআরজি’ (350.org) এই রায়কে ‘বিধ্বংসী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা বলেছে, এই রায় একটি বিপদজনক বার্তা দেয় যে জীবাশ্ম জ্বালানি জায়ান্টরা আমাদের গ্রহের ধ্বংসের বিরুদ্ধে কথা বলাদের চুপ করাতে আদালতের আশ্রয় নিতে পারে।
গ্রিনপিস এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মতে আপিলের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
আপিলটি সরাসরি রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে যাবে, কারণ নর্থ ডাকোটাতে আপিল বিভাগের কোনো আদালত নেই।
উল্লেখ্য, এনার্জি ট্রান্সফারের প্রতিষ্ঠাতা কেলসি ওয়ারেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন বড় অনুসারী।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান