গডমাদার: গ্রিসেলদা ব্ল্যাঙ্কোর উত্থান ও পতন
কোকেন ব্যবসার জগতে ‘গডমাদার’ নামে পরিচিত গ্রিসেলদা ব্ল্যাঙ্কো ছিলেন কলম্বিয়ার এক কুখ্যাত নারী, যিনি ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।
তার ক্ষমতা ও নিষ্ঠুরতার কাহিনী আজও সারা বিশ্বে আলোচিত হয়।
মেডেলিনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা:
১৯৪৩ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়ার মেডেলিনে গ্রিসেলদা ব্ল্যাঙ্কোর জন্ম হয়।
সেই সময় কলম্বিয়া “লা ভায়োলেন্সিয়া” নামক এক ভয়ংকর গৃহযুদ্ধ এর সাক্ষী ছিল, যেখানে বহু মানুষ নিহত হয়। দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা গ্রিসেলদা অল্প বয়সেই অপরাধ জগতে পা বাড়ান।
প্রথমে তিনি ছিঁচকে চুরি ও জাল টাকা তৈরির মতো কাজ করতেন।
বিবাহ ও অপরাধ জগতে প্রবেশ:
গ্রিসেলদা কার্লোস ট্রুজিলোকে বিয়ে করেন, যিনি জাল কাগজপত্র তৈরি ও মানুষ পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তাদের তিনটি সন্তান ছিল। কিন্তু তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয় এবং পরে ট্রুজিলোর মৃত্যু হয়।
অনেকে মনে করেন, গ্রিসেলদা নিজেই তার স্বামীকে হত্যা করেছিলেন। এরপর তিনি আলবার্তো ব্রাভোকে বিয়ে করেন, যিনি ছিলেন একজন মাদক পাচারকারী।
কোকেন সাম্রাজ্যের বিস্তার:
১৯৭০-এর দশকে কোকেনের চাহিদা বাড়তে শুরু করে এবং কলম্বিয়া এই ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
গ্রিসেলদা ব্ল্যাঙ্কো ও আলবার্তো ব্রাভো মিলে নিউইয়র্কে তাদের কোকেন সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।
তাদের নেটওয়ার্ক মাসে প্রায় আট কোটি ডলারের কোকেন সরবরাহ করত।
কিন্তু তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না, এবং ১৯৭৫ সালে ব্রাভোর মৃত্যু হয়।
এরপর গ্রিসেলদাকে ‘ব্ল্যাক উইডো’ বা ‘বিধবা’ নামে ডাকা হতে শুরু করে, কারণ তিনি তার একাধিক স্বামীকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ ছিল।
মায়ামিতে ক্ষমতার দাপট:
গ্রিসেলদা ব্ল্যাঙ্কো তার সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে সহিংসতার আশ্রয় নিতেন।
১৯৭৯ সালে মায়ামির একটি দোকানে তার নির্দেশে একজন ডিলার ও তার দেহরক্ষীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
১৯৮২ সালে তিনি তার সহযোগী জিসাস কাস্ত্রোকে হত্যার নির্দেশ দেন, কিন্তু তার বদলে নিহত হন কাস্ত্রোর দুই বছর বয়সী ছেলে।
গ্রিসেলদার ছেলে মাইকেল কর্লিওন ব্ল্যাঙ্কোর সামনেই ১৯৮৩ সালে তার তৃতীয় স্বামী দারিও সেপুলভেদার মৃত্যু হয়।
গ্রেফতার ও কারাজীবন:
দীর্ঘদিন আইনের চোখে ধুলো দিয়ে গ্রিসেলদা ১৯৮৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় গ্রেফতার হন এবং ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়।
পরে আরও কয়েকটি খুনের অভিযোগে তার সাজা বাড়ে।
২০০৪ সালে তাকে কলম্বিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার:
২০১২ সালে মেডেলিনের একটি কসাইখানার সামনে গ্রিসেলদাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তার মৃত্যুর পর তার মাদক সাম্রাজ্যের পতন হয়।
গ্রিসেলদার চার ছেলের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
তার কনিষ্ঠ পুত্র মাইকেল কর্লিওন ব্ল্যাঙ্কো মায়ের মৃত্যুর পর মাদক ব্যবসা ত্যাগ করেন এবং বর্তমানে পোশাকের ব্যবসা করেন।
বর্তমান পরিস্থিতি:
যদিও গ্রিসেলদা ব্ল্যাঙ্কো আর নেই, তবে তার সহিংসতার স্মৃতি আজও কলম্বিয়ার মাদক জগতে বিদ্যমান।
বর্তমানে অন্যান্য মাদক চক্রগুলি এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক