কানাডার গ্রস মরনে ন্যাশনাল পার্ক: এক শান্ত, সুন্দর গন্তব্য
পর্যটকদের ভিড় থেকে দূরে, প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে যারা ভালোবাসেন, তাদের জন্য কানাডার গ্রস মরনে ন্যাশনাল পার্ক হতে পারে আদর্শ একটি স্থান। নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডর প্রদেশের এই পার্কটি এখনো অনেক পর্যটকের কাছে অজানা, তবে এর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হওয়ার মতো অনেক কিছুই রয়েছে।
কানাডার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানগুলির মধ্যে একটি হলো বানফ ন্যাশনাল পার্ক, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ লক্ষ পর্যটকের আনাগোনা দেখা যায়। নিঃসন্দেহে বানফ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত, তবে যারা ভিড় এড়িয়ে কানাডার বন্য প্রকৃতির স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য গ্রস মরনে ন্যাশনাল পার্ক একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে।
গ্রস মরনে পার্কটি নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এই প্রদেশটি কানাডার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এবং এর আয়তন বিশাল – প্রায় ৪,০৫,০০০ বর্গ মাইল। এখানকার প্রকৃতিও বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। এখানকার প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের বসবাস এবং প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি মুজ হরিণের বাস।
উল্লেখ্য, এই মুজ হরিণগুলো স্থানীয় নয়, বরং ২০ শতকের শুরুর দিকে এদেরকে শিকারের উদ্দেশ্যে নিউ ব্রান্সউইক থেকে এখানে আনা হয়েছিল।
এই অঞ্চলের দুর্গমতাই গ্রস মরনে ন্যাশনাল পার্ককে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য। এখানে রয়েছে উঁচু পর্বতমালা, যেমন গ্রস মরনে পর্বত, যা পার্কটির নামকরণের কারণ। এছাড়াও, এখানে দেখা যায় মনোরম ফিয়োর্ড, রুক্ষ পাথুরে ভূমি, সবুজ বনভূমি এবং পাথুরে উপকূলীয় পথ।
গ্রস মরনে ন্যাশনাল পার্কে আসা পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার সুযোগ রয়েছে। এখানে কেউ কেউ সেন্ট লরেন্স উপসাগরের পাশে হেঁটে বেড়াতে পারেন, আবার কেউ গ্রস মরনে পর্বতের চূড়ায় উঠে চারপাশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
ট্রেকিং ভালোবাসেন এমন মানুষের জন্য এখানে রয়েছে দুর্গম পথ, যেখানে অভিজ্ঞ গাইড এবং নৌকার সাহায্য নিতে হয়।
পার্কের অন্যতম আকর্ষণ হলো টেবিলল্যান্ডস নামক একটি এলাকা। এটি একটি বিরল ভূতাত্ত্বিক ঘটনার কারণে গঠিত হয়েছে। এখানে পৃথিবীর অভ্যন্তরের কিছু অংশ ভূপৃষ্ঠের উপরে উঠে এসেছে।
এক বিলিয়ন বছর আগে গঠিত এই টেবিলল্যান্ডস গ্রস মরনেতে দেখা যায়, যা পৃথিবীর আর কোথাও সহজে দেখা যায় না।
বর্তমানে, গ্রস মরনে ন্যাশনাল পার্কে বছরে প্রায় আড়াই লাখ পর্যটকের আগমন ঘটে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সহজে যাওয়াও সম্ভব।
টরন্টো থেকে সরাসরি ফ্লাইটে ডিয়ার লেক রিজিওনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছে, মাত্র ২৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই আপনি পার্কটিতে প্রবেশ করতে পারবেন।
আশা করা যায়, এই জায়গাটি বাংলাদেশের প্রকৃতি প্রেমীদের কাছেও অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে, যেখানে তারা প্রকৃতির নীরবতা ও সৌন্দর্যের এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার