জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি: ‘গ্রাউন্ডহগ ডে’ সিনেমা বদলে দিল এক ব্যক্তির জীবন।
কাজের চাপ, সম্পর্ক এবং জীবনের একঘেয়েমিতে জর্জরিত ছিলেন তিনি। প্রতিদিনের রুটিন যেন একই ছকে বাঁধা। সকালে ঘুম থেকে ওঠা, অফিসের জন্য দৌড়ানো, সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফেরা—এটাই ছিল তার জীবন।
এই দমবন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে, তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন এক নতুন পথ। আর এই পরিবর্তনের পেছনে ছিল একটি সিনেমার প্রভাব।
ঘটনাটি দশ বছর আগের। এক সন্ধ্যায়, ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফিরে তিনি একটি সিনেমা দেখতে বসেন। সিনেমাটির নাম ছিল ‘গ্রাউন্ডহগ ডে’।
সিনেমার গল্পে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট দিনে বারবার ফিরে আসছেন। শুরুতে এই বিষয়টি বেশ মজাদার মনে হলেও, ধীরে ধীরে এর গভীরতা অনুভব করেন তিনি।
সিনেমা প্রধান চরিত্রের মতো তিনিও যেন তার নিজের জীবনের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছিলেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠা, কাজের চাপ আর ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে মনোমালিন্য—এসবের মধ্যে তিনি আটকে ছিলেন।
বাস্তবতা ছিল সিনেমার থেকেও কঠিন। একদিকে একাধিক কাজ করে সংসার চালানো, অন্যদিকে সঙ্গীর মদ্যপানের সমস্যা—সবকিছু মিলে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।
দিনের বেলা একটি কারখানায় কাজ করতেন, সন্ধ্যায় করতেন রং মিস্ত্রীর কাজ। এছাড়াও, সুযোগ পেলেই গানের শিক্ষকতা করতেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতেন।
সং সংসারের সমস্ত দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে, কারণ তার সঙ্গীর পক্ষে নিয়মিত কাজ করা সম্ভব ছিল না। তিনি বুঝতে পারছিলেন, এই জীবন তাকে আর ভালো লাগছে না।
‘গ্রাউন্ডহগ ডে’ সিনেমাটি দেখার পর, তিনি যেন নতুন করে ভাবতে শুরু করলেন। সিনেমাটি তাকে জীবনের অনেক কঠিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল।
এর কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি তার চারটি চাকরি ছেড়ে দেন। সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং একটি নতুন বাড়িতে ওঠেন। জীবনের এই বড় পরিবর্তনের পর, তিনি প্রায় পাঁচ সপ্তাহ কোনো কাজ করেননি।
এই সময়টা ছিল তার জন্য আত্ম-অনুসন্ধানের। জীবনের আসল উদ্দেশ্য কী, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
এরপর তিনি একটি ক্যাটারিং-এর কাজ নেন, তবে কাজের সময় সীমিত রাখেন। রান্নার কাজটি চাপপূর্ণ হলেও, এতে ছিল এক ধরনের স্বাধীনতা। কারণ, প্রতিদিনের কাজ একই রকম হতো না।
নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সুযোগ ছিল।
বর্তমানে তিনি নতুন একটি সম্পর্কে আবদ্ধ এবং তার পেশাগত জীবনেও অনেক সুখী। মাঝেমধ্যে তিনি ভাবেন, আবার যদি ‘গ্রাউন্ডহগ ডে’ সিনেমাটি দেখেন, তাহলে হয়তো বর্তমান জীবন নিয়েও তার মনে একই ধরনের উপলব্ধি আসবে।
কিন্তু নতুন করে জীবন শুরু করার মতো মানসিক শক্তি এখন তার নেই।
জীবন আমাদের অনেক সময় একঘেয়েমির দিকে ঠেলে দেয়। অনেক সময় আমরা সেই চক্র থেকে বেরোতে পারি না। তবে, আত্ম-অনুসন্ধান এবং পরিবর্তনের সাহস থাকলে, জীবনকে নতুন করে সাজানো সম্ভব।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।