গ্রাউন্ডহগ ডে ও রাশিয়ান ডলের ভক্ত? এই উপন্যাসগুলো আপনার জন্য!

নতুন ধরনের সাহিত্য: আকর্ষণীয় গল্পের দুনিয়া

বর্তমানে, সাহিত্য জগতে এক নতুন ধারার উন্মোচন হয়েছে, যা ‘হাই-কনসেপ্ট ফিকশন’ নামে পরিচিত। এই ধরনের গল্পগুলোতে একটি অনন্য এবং সহজে বোধগম্য ধারণা বা প্লট থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো একটি সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে একাধিক বাস্তবতার সৃষ্টি হওয়া, সময়ের জাল বিস্তার করে ভ্রমণ, অথবা একই দিন বারবার ফিরে আসা – এই ধরনের বিষয়গুলোই এই ধারার মূল আকর্ষণ।

সম্প্রতি প্রকাশিত ফ্লোরেন্স ন্যাপের উপন্যাস ‘দ্য নেমস’ এই ধরনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গল্পটি তিনটি ভিন্ন জগতে বিস্তৃত, যেখানে একটি শিশুর নামকরণের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে জগৎগুলো পরিবর্তিত হয়।

এছাড়া, কালের অন্য জগৎ থেকে আসা শরণার্থীদের নিয়ে কালিয়ানে ব্র্যাডলির লেখা ‘দ্য মিনিস্ট্রি অফ টাইম’ এবং ডেনিশ লেখিকা সলভেই বেলের উপন্যাস ‘অন দ্য ক্যালকুলেশন অফ ভলিউম’-এর মতো বইগুলোও এই ধারার জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

দ্বিতীয় উপন্যাসটিতে, প্রধান চরিত্রটি প্রতিদিন একই তারিখে ঘুম থেকে ওঠে। এই ধরনের প্লটগুলো পাঠকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।

হাই-কনসেপ্ট ফিকশনের জনপ্রিয়তার কারণ বিশ্লেষণ করলে দুটি দিক উঠে আসে। প্রথমত, বিপণন কৌশল হিসেবে এই ধরনের গল্পের ধারণাগুলো খুবই কার্যকরী।

একটি আকর্ষণীয় প্লট সহজেই পাঠকের মনে দাগ কাটে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পরে।

দ্বিতীয়ত, পাঠকেরা এখন বিভিন্ন ধরনের গল্প গ্রহণ করতে প্রস্তুত হচ্ছেন, যা আগে তারা এড়িয়ে চলতেন। তারা এখন কল্পনাবাদী গল্পের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন, যেখানে লেখকগণ বিভিন্ন ধরনের ধারণা নিয়ে কাজ করেন।

এই ধারার লেখকেরা গল্প বলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেন, যেমন – সময় ভ্রমণ, ভবিষ্যতের জগৎ এবং বিপর্যয়ের চিত্র ইত্যাদি।

তবে, গল্পের মূল আকর্ষণ হলো এর গভীরতা এবং মানবিক অনুভূতি।

এই প্রসঙ্গে, লেখক জেনি কলগান বলেন, হাই-কনসেপ্ট ফিকশন পাঠকদের মধ্যে “তাদের পুরোনো ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার এবং বিভিন্ন ধরনের কল্পনাবাদী জগতের সন্ধান করার” একটি আগ্রহ তৈরি করেছে।

তিনি আরও যোগ করেন, “বিজ্ঞান কল্পকাহিনী হলো ভালোবাসার গল্প, দুঃখ বা হারানোর গল্প বলার একটি সংক্ষিপ্ত রূপ।

কিছু ক্ষেত্রে এটি খুব ভালো কাজ করে, আবার অনেক সময় এর কোনো প্রভাব থাকে না।”

অতীতে, কেট অ্যাটকিনসনের ‘লাইফ আফটার লাইফ’, অড্রে নিফেনেগারের ‘দ্য টাইম ট্র্যাভেলার্স ওয়াইফ’, নাওমি অ্যালডারম্যানের ‘দ্য পাওয়ার’ এবং ডেভিড মিচেলের ‘ক্লাউড অ্যাটলাস’-এর মতো বইগুলোও এই ধরনের সাফল্যের উদাহরণ।

লেখিকা কালিয়ানে ব্র্যাডলি মনে করেন, এই ধরনের গল্পের ধারণা “আরও জটিল বা বহু-স্তরবিশিষ্ট কিছুতে প্রবেশের সহজ উপায়”।

তিনি ‘ড্রাকুলা’র উদাহরণ দিয়ে বলেন, “এখানে একজন রহস্যময় বিদেশি আছে, যিনি অভিবাসন এবং নারীর যৌনতা সম্পর্কে একটি ভীতি তৈরি করেন।”

ব্র্যাডলি আরও যোগ করেন, “একটি আকর্ষণীয় ধারণা থেকে লেখার শুরুটা অনেক লেখকের জন্য সহজ হতে পারে, যেখানে তারা তাদের কল্পনার বিস্তার ঘটানোর সুযোগ পান।

হাই-কনসেপ্ট ফিকশন এখন সাহিত্য জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে, যা পাঠকদের নতুন ধরনের গল্প উপভোগ করতে উৎসাহিত করছে।

এই ধারার লেখকেরা তাদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে গল্প বলার চিরাচরিত রীতি ভেঙে দিচ্ছেন, যা সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *