গোপন দ্বীপে মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ, চাঞ্চল্যকর তথ্য!

গয়াতে মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ: অতীত আর বর্তমানের মেলবন্ধন

বিশ্বের বুকে এক সময়ের শক্তিশালী মায়া সভ্যতার কথা আজও অনেকের অজানা। গুয়াতেমালার গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা তাদের প্রাচীন নগরীগুলো যেন এক একটি রহস্য।

কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া সেই মায়া সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন আজও টিকে আছে, যা প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং সাধারণ মানুষের কাছে আজও সমানভাবে আকর্ষণীয়। তাদের নির্মিত বিশাল পিরামিড, মন্দির, এবং পাথরের ফলকগুলো (stelae) তাদের উন্নত জ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রমাণ দেয়।

সম্প্রতি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর একটি প্রতিবেদনে গুয়াতেমালার মায়া ধ্বংসাবশেষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যা আমাদের দেশের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

গুয়াতেমালার উত্তরাঞ্চলে, বিশেষ করে পেতেন (Petén) অঞ্চলে মায়া সভ্যতার অনেক নিদর্শন আজও বিদ্যমান। এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তিকাল (Tikal)।

রাজধানী গুয়াতেমালা সিটি থেকে প্রায় নব্বই মিনিটের পথ পাড়ি দিলে এই প্রাচীন শহরে পৌঁছানো যায়। তিকাল মধ্য আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম এবং সুপরিচিত মায়া প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।

এখানে রয়েছে বিশাল বিশাল মন্দির, প্রাসাদ, এবং অন্যান্য স্থাপত্য যা এক সময় মায়া শাসকদের ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল। এখানকার ‘গ্রেট প্লাজা’ (Great Plaza)-য় অবস্থিত ‘টেম্পল অফ দ্য গ্রেট জাগুয়ার’ (Temple of the Great Jaguar) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ঐতিহাসিকদের মতে, মায়া সভ্যতা একসময় তাদের উন্নতির শিখরে পৌঁছেছিল, কিন্তু নবম শতকে তারা ধীরে ধীরে তাদের শহরগুলো ত্যাগ করতে শুরু করে।

এর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব, এবং দীর্ঘ সময় ধরে চলা খরাকে দায়ী করা হয়। তবে, মায়াদের সংস্কৃতি আজও একেবারে হারিয়ে যায়নি।

গুয়াতেমালার জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ আজও মায়া বংশোদ্ভূত, যারা তাদের সংস্কৃতি, ভাষা, এবং ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।

টিকালের কাছেই রয়েছে উয়াক্সাকতুন (Uaxactún) নামের আরেকটি প্রাচীন শহর। এটি সম্ভবত মায়াদের প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞান কেন্দ্র ছিল, যেখানে তারা নক্ষত্র এবং গ্রহদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করত।

এখানকার মন্দিরগুলোতে সূর্যের আলো কীভাবে পড়ত, তা দেখে তারা বিভিন্ন উৎসবের পরিকল্পনা করত। এই অঞ্চলের স্থানীয় মায়ারা তাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করছেন।

তারা পর্যটকদের জন্য গাইড ট্যুর এবং স্থানীয় হস্তশিল্প বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করেন।

পেতেন লেকের (Lake Petén Itzá) কাছে একটি ব্যক্তিগত দ্বীপে রয়েছে একটি বিশেষ সংগ্রহশালা, যেখানে মায়া সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।

স্থানীয় একটি পরিবারের তত্ত্বাবধানে এই জাদুঘরে মায়া সংস্কৃতির নানান জিনিস, যেমন—মাটি ও কাঠের তৈরি মুখোশ, পাথরের মূর্তি, এবং প্রাচীনকালের অস্ত্রশস্ত্র দেখা যায়।

ঐতিহাসিক স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থানীয় সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও, যেমন—পাহাড়পুর এবং ময়নামতীর মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

একইসাথে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং তাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গুয়াতেমালার মায়াদের এই প্রচেষ্টা আমাদের জন্য একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *