বন্দুকের আঘাত: শিশুদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, জরুরি বিভাগের ভয়াবহ চিত্র!

বন্দুক-সংক্রান্ত আঘাত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি বিভাগে প্রতি আধ ঘন্টায় চিকিৎসা, গবেষণার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি বিভাগগুলোতে বন্দুকের গুলিতে আহত হওয়া রোগীদের চিকিৎসার চিত্র প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৩০ মিনিটে একজন করে বন্দুকের গুলিতে আহত রোগী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। এই আঘাতগুলো রাতের বেলা, ছুটির দিনগুলোতে এবং বিশেষ করে স্বাধীনতা দিবস ও নববর্ষের মতো উৎসবে বেশি হয়।

তবে বন্দুক-সংক্রান্ত আঘাতের কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে পরিচালিত গবেষণাগুলোর ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। সরকারি অর্থায়নে কাটছাঁটের প্রস্তাব আসায় এই গবেষণাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention বা CDC) এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, নিউ মেক্সিকো, নর্থ ক্যারোলিনা, ওরেগন, উটাহ, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া এবং ডিসি – এই দশটি অঞ্চলের তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, জরুরি বিভাগে আগত রোগীদের মধ্যে বন্দুকের গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনাগুলো সাধারণত রাত আড়াইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি থাকে। অন্যদিকে, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তথ্য জরুরি বিভাগের জনবল ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে পারে। আহত রোগীর সংখ্যা কখন বেশি থাকে, তা জানা থাকলে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। এর ফলে আহত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যাবে এবং জীবন বাঁচানো সহজ হবে।

তবে, গবেষণাটি বন্ধ হয়ে গেলে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, বন্দুকের আঘাতের কারণে শিশুদের মৃত্যুর হার বাড়ছে। এছাড়া, বন্দুকের মাধ্যমে আত্মহত্যাও বেড়েছে, যা গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (US Department of Health and Human Services) এবং ফেডারেল বাজেটে পরিবর্তনের প্রস্তাব আসায় বন্দুক-সংক্রান্ত আঘাত নিয়ে গবেষণা ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই গবেষণাগুলো মূলত জাতীয় আঘাত প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের (National Center for Injury Prevention and Control) অধীনে পরিচালিত হয়। সরকারি তহবিল কমে গেলে এই কেন্দ্রটির কার্যক্রম সীমিত হয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্দুক-সংক্রান্ত আঘাতের কারণ অনুসন্ধান এবং তা প্রতিরোধের জন্য এই গবেষণাগুলো অত্যন্ত জরুরি। বন্দুক সহিংসতা বিষয়ক গবেষণা দীর্ঘদিন ধরে অর্থ সংকটে ভুগছে।

১৯৯৬ সালে ‘ডিকি অ্যামেন্ডমেন্ট’-এর কারণে ফেডারেল অর্থ ব্যবহার করে বন্দুক নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয় নিয়ে গবেষণা করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। যদিও ২০২০ সালে বন্দুক সহিংসতা বিষয়ক গবেষণার জন্য কিছু তহবিল পুনরায় বরাদ্দ করা হয়েছিল, কিন্তু এখন বাজেট কাটছাঁটের কারণে সেই গবেষণাগুলোও হুমকির মুখে পড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, গবেষণা বন্ধ হয়ে গেলে বন্দুক সহিংসতা প্রতিরোধের প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *