“একদিন লাইক দিস” : কিভাবে এলবো’র এই গান বিয়ের অনুষ্ঠানে আজও জনপ্রিয়?
গান ভালোবাসেন এমন মানুষের কাছে এলবো (Elbow) একটি সুপরিচিত নাম।
তাদের “ওয়ান ডে লাইক দিস” (One Day Like This) গানটি শুধু একটি সুরের মূর্ছনা নয়, এটি ভালোবাসার উদযাপন।
গানটি তৈরি হওয়ার পেছনের গল্প শুনলে বিস্মিত হতে হয়।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ব্যান্ডের প্রধান শিল্পী গাই গার্ভে (Guy Garvey) গানটি তৈরির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।
গাই গার্ভের মতে, ২০০৭ সালের দিকে ব্যান্ডের সদস্যরা কঠিন সময় পার করছিলেন।
আগের তিনটি অ্যালবাম যে রেকর্ড লেবেলের অধীনে প্রকাশ হয়েছিল, সেই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে ছিল।
চতুর্থ অ্যালবাম “সেলডম সিন কিড” (Seldom Seen Kid) প্রকাশের জন্য তারা “ফिक्शन” (Fiction) নামক একটি নতুন লেবেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।
আর্থিক সংকট তখন তাদের কড়া নাড়ছিল।
গার্ভের মনে হচ্ছিল, হয়তো এবার একটা “আসল চাকরি” করতে হবে।
হয়তো কোনো নাইটক্লাবের হিসাবরক্ষক অথবা তার ব্যান্ডের অন্য সদস্যরা অন্য কোনো পেশা বেছে নিতে বাধ্য হতেন।
ঠিক সেই সময়েই ইউনিভার্সাল মিউজিকের প্রধান ডেভিড জোসেফ (David Joseph) তাদের ফোন করে অ্যালবামটি নিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং রেডিওতে প্রচারের জন্য তাদের অন্য কোনো গান আছে কিনা জানতে চান।
গার্ভে জানান, দশটি গান তৈরি করতে তাদের আড়াই বছর লেগেছে, তাই নতুন কিছু তৈরি করা কঠিন।
তবে তিনি চেষ্টা করতে রাজি হন।
অ্যালবামের চূড়ান্ত মাস্টারিংয়ের জন্য হাতে ছিল মাত্র দুই সপ্তাহ।
এরপর শুরু হয় গান তৈরির তোড়জোড়।
বাথরুমে গোসল করার সময় প্রথম গানের আইডিয়া আসে।
গানের প্রথম লাইনটি ছিল, “ব্লিঙ্কিং ইন দ্য মর্নিং সান” (Blinking in the morning sun)।
এরপর স্টুডিওতে গিয়ে ক্রেইগ পটারের (Craig Potter) সঙ্গে আলোচনা করে গানটি তৈরির কাজ শুরু হয়।
গার্ভের বহুদিনের পুরোনো একটি লিরিক ছিল – “থ্রো দোজ কার্টেনস ওয়াইড” (Throw those curtains wide)।
সেই লাইনটি ব্যবহার করেই গানটি নতুন রূপ পায়।
গানটির সুরের জন্য স্যালফোর্ডের ব্লুপ্রিন্ট স্টুডিওতে (Blueprint Studios) কাজ করা হয়।
ক্রেইগ পটার গানের বিভিন্ন কর্ড তৈরি করেন।
গার্ভের ইচ্ছে ছিল, গানের প্রতিটি লাইন যেন স্ট্রিং সেকশন দ্বারা প্রতিধ্বনিত হয়।
তিনি তখন “দ্য ভার্ভ”-এর “বিটার সুইট সিম্ফনি” (Bitter Sweet Symphony) এবং “ম্যাসিভ অ্যাটাক”-এর “আনফিনিশড সিম্প্যাথি” (Unfinished Sympathy) গানগুলো শুনতেন।
এই গানগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে “ওয়ান ডে লাইক দিস”-এর সুর তৈরি করা হয়।
গার্ভের মনে আছে, গানটি তৈরি হওয়ার সময় তিনি ভালোবাসায় ছিলেন এবং ম্যানচেস্টার শহরটিকে দারুণ লাগছিল।
ভবিষ্যতের দিনগুলো ছিল উজ্জ্বল।
তার মনে হয়েছিল, এই আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত।
গানটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে, এখনো সপ্তাহে অন্তত দু’বার কোনো না কোনো মানুষ এসে গার্ভেকে জানায়, তারা তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে এই গানটি ব্যবহার করেছেন।
একবার তো এমনও দেখা গিয়েছিল, টিউব লাইনের দু’পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকশ মানুষ একে অপরের দিকে তাকিয়ে গানটি গাইছে।
এই গানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ক্রেইগ পটার জানান, “সেলডম সিন কিড” ছিল এলবোর হয়ে তার প্রথম অ্যালবাম, যা তিনি প্রযোজনা ও মিক্সিংয়ের কাজ করেছিলেন।
গানটি তৈরির সময় তারা “বিস্টি বয়েজ” (Beastie Boys) এবং রুফাস ওয়াইনরাইটের (Rufus Wainwright) “বিউটিফুল চাইল্ড” (Beautiful Child) গানগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
সাধারণত, তারা একটি গান তৈরি করতে মাসখানেক সময় নেন, এমনকি অনেক বছর পরও গানের কাজ করেন।
কিন্তু “ওয়ান ডে লাইক দিস” তৈরি করতে তাদের দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগেনি।
গানের শুরুতে গার্ভের তৈরি করা সুরের সঙ্গে পটার কর্ড যুক্ত করেন।
গানের শেষে কর্ডগুলো লেখার পর তারা বুঝতে পারেন, গানটিতে “হেই জুড”-এর (Hey Jude) মতো একটা অনুভূতি আছে।
গানটি তৈরির সময় কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি, বরং শুরু থেকেই এটি সহজ ছিল।
পটার আরও জানান, গানটিতে তারা বেশি সংখ্যক স্ট্রিং ব্যবহার করেননি।
আসলে, সময়ের অভাবে তারা তাদের তিনজন ট্যুরিং শিল্পী – স্টেলা পেজ, জোটে ওসাহার্ন এবং ইয়ান বার্ডজেকে (Stella Page, Jote Osahn, Ian Burdge) নিয়ে কাজ করেছিলেন।
ব্লুপ্রিন্ট স্টুডিওর বড় একটি কক্ষে তাদের বসানো হয় এবং বিভিন্ন কোণ থেকে তাদের শব্দের রেকর্ড করা হয়।
এলবোর নতুন ইপি (EP) “অডিও ভার্টিগো ইকো” (Audio Vertigo Echo) আগামী ৬ জুন মুক্তি পাবে।
এছাড়া, ১৩ জুন থেকে তাদের ইউকে ট্যুর শুরু হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান